শিশুদের স্মৃতির বিকাশে অন্তরায় বায়ুদূষণ

শিশুদের স্মৃতির বিকাশে অন্তরায় বায়ুদূষণ

বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ কতৃক প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য। সংস্থাটি দেখিয়েছে, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তায় বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের বৌদ্ধিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এনভায়রনমেন্টাল পলিউশান নামক পত্রিকায় কিছুদিন আগেই প্রকাশিত এই গবেশনাপত্র অনুযায়ী, শিশুদের কার্যকরী স্মৃতির বুনিয়াদ নষ্ট হতে পারে বাতাসের এই দূষণে।

ব্রেথ প্রোজেক্টের মধ্যেই এই গবেষণাটি হয়েছে। তাদের পূর্ববর্তী গবেষণাও যানবাহন সংক্রান্ত দূষণের প্রভাবে স্কুলে কীভাবে বৌদ্ধিক বৃদ্ধি ধীর হয়, তা’ই নিয়ে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, স্কুল থেকে বাড়ি- এই হাঁটাপথে, বিশেষত শহর এলাকার বাচ্চারা প্রায় ২০% ব্ল্যাক কার্বন শ্বাসের সাথে নিচ্ছে । এই ব্ল্যাক কার্বনের উৎস মূলত মোটরযান ।

মুখ্য গবেষক মার আলভারেজ-পেদ্রেরোল বলছেন, খুব অল্প সময়েই জন্য এই উচ্চমাত্রার দূষণের পরিবেশে থাকার দরুন ব্যাপকতর ক্ষতি হচ্ছে শিশুস্বাস্থ্যের। তিনি আরও জানাচ্ছেন, যেহেতু বাচ্চাদের ফুসফুসের ধারণক্ষমতা কম, তাই শ্বাসপ্রশ্বাসের হারও বেশী, সেহেতু তাদের শরীরের সাথে সাথে মনন-চিন্তার মতো মানসিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে দূষণ।

বার্সেলোনা শহরের ৩৯টি স্কুলের ৭-১০ বছর বয়সী ১২০০ জন শিশুকে নিয়ে সমীক্ষাটি চালানো হয়। তাদের সবাই’ই হেঁটে যাতায়াত করে। বাচ্চাদের কার্যশীল স্মৃতি এবং মনোযোগের ক্ষমতা ১২ মাস ধরে চলা এই গবেষণায় বারবার যাচাই করে দেখা হয়েছিল।

সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, পি এম ২.৫ এবং ব্ল্যাক কার্বন মূলত কেজো স্মৃতির বৃদ্ধির হার কমিয়ে দেয়। তাদের বুদ্ধিমাত্রার বিকাশের হার উপরোক্ত দুটি দূষকের উপস্থিতিতে যথাক্রমে ৪.৬% এবং ৩.৯% নিম্নগামী হয়। নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের প্রভাবে কোনো ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি যদিও। এবং কোনো দূষকেরই হয়তো তেমনভাবে মনোযোগকে ব্যাহত করার ক্ষমতা নেই। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় পি এম ২.৫ এবং ব্ল্যাক কার্বনের উপস্থিতিতে, গবেষণা পেশ করেছে তেমনই তথ্য।

সহ গবেষক জর্ডি সুনাইর যদিও এই সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ যে বাড়ি থেকে স্কুলের পথে হেঁটে বা সাইকেলে যাওয়া খারাপ। এই দুটি উপায়ের সাথেই শারীরিক পরিশ্রমের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে, যা কিনা অবশ্যই শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয়। শ্রমের যে সুফল শিশুরা পাবে, তার তুলনায় দূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব বড়োই অকিঞ্চিৎকর।

প্রোফেসর পেদ্রেরোল বলছেন, এই একই আশঙ্কা সমানভাবেই গাড়ি বা বাসে করে স্কুলে আসা শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এবং সমাধানও দুটি ক্ষেত্রেই এক- স্কুল চত্বরে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে সুন্দর পরিবেশে শিশুদের পড়াশুনোর ব্যবস্থা করা ।