হয়তো এখন জীবাশ্ম হয়ে আছি

হয়তো এখন জীবাশ্ম হয়ে আছি

হয়তো এখন জীবাশ্ম হয়ে আছি

দুগগা দুগগা ! এ পথে আমি পা ফেলিনি কোনোদিন, অভিজিৎ-এর স্বপ্নের মায়ায় ভুলে এসে পড়েছি। বিজ্ঞান আমার ভয়ের ঠাঁই। সেই জন্যেই অভিজিৎ-এর উদ্দেশ্যটা আমার কাছে জরুরি। বিজ্ঞানকে ঘরের লোক ক’রে নিতে হলে, তাকে ঘরের ভাষায় চিনতে হবে।  বিজ্ঞানের সঙ্গে মাতৃভাষার যোগ ঘটাতে নজর দিয়ে গিয়েছেন আমাদের বাঙালির উচ্চশিক্ষার প্রথম যুগের জরুরি পিতৃপ্রতিম বৈজ্ঞানিকরা, সুন্দর আর সুষ্ঠু ভাষা ছিল তাঁদের। বিজ্ঞানের শক্ত বিষয় সরলভাবে বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা ছিল তাঁদের । সাহিত্য কাকে বলে আমি আজও জানিনা । মানুষের কাছে মানুষের বোধকে যা সুচারুভাবে, কল্পনা আর যুক্তির যুগ্ম প্রভায় উজ্জ্বল করে পৌঁছে দিতে পারে, তাকেই আমি সাহিত্যের লক্ষ্য বলে মনে করি । আমাদের পিতৃপ্রতিম বৈজ্ঞানিকরা  বিজ্ঞান নিয়ে ঠিক সেই ভাবেই আমাদের কাছে এগিয়ে এসেছিলেন । আমাদের অপ্রস্তুত মনের সঙ্গে আত্মীয়তা ঘটাতে চেয়েছিলেন মানুষের নবলব্ধ সম্পদ, আধুনিক বিজ্ঞানের। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, এঁদের কলমে বাংলা ভাষার কী আদর, কী মহিমা!

গঙ্গা, তুমি কোথা হইতে আসিতেছ? মহাদেবের জটা হইতে।  কিন্তু গল্পটা মহাদেবের নয়, গঙ্গানদীর উৎপত্তির।

রবীন্দ্রানাথ তাঁর বিশ্বভারতীর পাতলা আর গভীর ছোট ছোট বইগুলিতে, বিশ্ববিদ্যা সংগ্রহে, এই একই চেষ্টা করেছেন । শিল্পসম্মত, সরল বাংলাভাষায় সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আর মস্তিষ্কে জ্ঞান বিজ্ঞানের সহজ স্থান করে দিতে চেয়েছেন । অতি চমৎকার বইপ্রকাশ করেছেন আমাদের মতো সাধারণ পড়ুয়াদের জন্য। তাতে ইতিহাস, ধর্ম, শিল্প, সংস্কৃতির সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে এসেছে মহাবিশ্বের মহাকালের কথা, বিজ্ঞান।  মাতৃভাষায় বিজ্ঞানের বিচ্ছুরণ বাংলায় সর্বজনে আদৃত হয়েছে। আমি মানি যে, বিজ্ঞানের অনুশীলন  মাতৃভাষায় হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আজকের ভারতের গ্রামগ্রামান্তে, যেখানে শিক্ষা আজও  পৌঁছোচ্ছে অতি বিলম্বিত লয়ে। বৃহৎ বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে তো, ইংরিজি চাই’ই । আন্তর্জালের ভাষা ইংরিজি, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরিজিতে বিজ্ঞান তাদের পড়তেই হবে । এঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারী, বাণিজ্য,  আইন, যা পড়তে চাইবে, মুল পাঠ্যবই ইংরিজিতে । তাই ইংরিজি ভাষাজ্ঞান এখন আগের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

যারপরনাই দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, আমাদের শিশুরা প্রথম থেকেই মাতৃভাষায় অরুচি আস্বাদন করে,  বইয়ের সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হয়, বাংলা শিশুপাঠ্য স্কুলপুস্তকের নিদারুণ অসুন্দরতায় । গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের এই অসুবিধেটা ডুবে যায় আরো অনেক বড় বড়, প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামের মধ্যে, রাস্তার অভাব, জলের অভাব, শৌচালয়ের অভাব, মিড-ডে মিলের বাস্তবতায় বইয়ের নান্দনিকতা তুচ্ছ হয়ে যায় । কিন্তু একটা চিত্তাকর্ষক সুশ্রী বই হাতে পেলে কোন শিশুর না মন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ? বলতে লজ্জা করছে, আমার  স্কুলের বই লেখার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমাদের বাংলা স্কুলপাঠ্য বইয়ের বড় বড় প্রকাশকেরা সব চেয়ে কম দামের , কাঁচা হাতের শিল্পীদের দিয়ে পাঠ্য বইয়ের ছবি আঁকান, এবং সব চেয়ে কম রঙ ব্যবহার করেন । বাচ্চাদের হাতে তুলতেই ইচ্ছে করেনা সেই  বোরিং, বর্ণহীন, শ্রীহীন বই, পড়া দুরস্থান! ইংরিজি পাঠ্য বইয়ের বেলায় কিন্তু তাঁর বিপরীত । সুন্দর ছবি, রঙচঙের অভাব হয় না । কাগজ ভালো । চিত্তাকর্ষক প্রস্তুতি থাকে । আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের মাতৃভাষায় প্রকাশকেরাই সংকীর্ণ মনে, কার্পণ্য আর অবহেলার সঙ্গে  মাতৃভাষায় পাঠ্যবই ছেপে, নিজেদের বাচ্চাদের মাতৃভাষা থেকে দুরে ঠেলে দিচ্ছেন । বাচ্চা বয়েসে যদি মাতৃভাষাকে ভালো না’ই বাসতে শিখলো, তাহলে তারা বড় হয়ে কীসের জন্য বাংলায় বিরচিত বিজ্ঞানে সাহিত্যরস খুঁজতে যাবে? কিম্বা সাহিত্যে বিজ্ঞান?

সাহিত্যে জাল পেতে, তার শরীরে লুকিয়ে থাকা ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বটানি ভুবিজ্ঞান ধরা, এটা একটু গোলমেলে বাপু । যেমন, ধরা যাক, আমি মনে করি না “সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা”, কিম্বা “জলসিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রভসে”, অথবা “মাটির বুকের মাঝে বন্দী যে জল লুকিয়ে থাকে” ইত্যাদি   আমাদের  বিভিন্ন  বিজ্ঞানের কথা বলছে। বৈজ্ঞানিকরা তার টিকি টেনে ধরতে পারলেও আমরা পারবো না, চাইবোও না।

এই মহান বিশ্ব প্রকৃতিতে বিজ্ঞানই তো সর্বস্ব । প্রকৃতির রূপ অন্তরে-অন্তরে তো বিজ্ঞানেরই তৈরি, পুর্ণিমার   বাঁধভাঙ্গা চাঁদের আলো, কালবৈশাখীর আকাশ ঢাকা কালো মেঘ, শ্রাবণের ঝরঝর বৃষ্টিতে দাদুরীর ডাক, গ্রীষ্ম রুদ্র মুর্তি, অমাবস্যা পুর্ণিমার অলখ টানে সমুদ্রের উথালপাথাল, সাহিত্য তাদের নিয়ে যতই মাতামাতি করুক,  কোনটাই বা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে?

কিন্তু তা ব’লে সাহিত্যে তার ব্যবহার আর বিজ্ঞানে তার ব্যবহার তো এক নয়। দুটির উদ্দেশ্য আমার কাছে দু-রকম । এক জায়গায় আমি চাইছি দেখতে, শুনতে, স্পর্শ করতে, গন্ধ নিতে, স্বাদ নিতে, আরেক জায়গায় আমি চাইছি মগজ দিয়ে বুঝে নিতে। “কেন?” এবং তার উত্তর, “কীভাবে?” আমার বোধবুদ্ধিতে  এই শব্দ দুটি বিজ্ঞানের গোড়ার কথা । সাহিত্যের মোটেই মাথা ঘামানো নেই এই কেন, আর কীভাবে  নিয়ে । বিজ্ঞানের অনুসন্ধান, আর সাহিত্যের ভাষা, দুই শক্তি একটু ভালোবেসে চেষ্টা করলেই হাত ধরাধরি করে চলতে পারে, তার মানে কিন্তু এই নয় যে বিজ্ঞান আর সাহিত্য মিলে মিশে এক হয়ে গেল । আমি বলতে চাই, ভালোবেসে সাহিত্যকে বিজ্ঞান আখ্যা দেওয়া যায় না, কিন্তু চেষ্টা করলে বিজ্ঞানকে সাহিত্যের স্তরে উন্নীত করা যেতেই পারে । তবে সে সৃষ্টি কত উন্নতমানের সাহিত্য হবে, তার ধারণা নেই আমার । প্রেম তো বিজ্ঞান দিয়ে বিচার, বর্ণনা, বিশ্লেষণ করা যায়, কিন্তু অনুভব করা যায় কি?

সাহিত্য অনুভবের জিনিস, বিজ্ঞান বোধগম্যতার । বিজ্ঞান-সাহিত্য সৃষ্টি করতে গিয়ে আমি যদি আমার  বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং তত্ত্ব পাঠকের কাছে পৌঁছেই দিতে না পারি তা হলে তো আমার বিজ্ঞ্যান আর সাহিত্য দুইই গোল্লায় গেল! ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ কি সবাই লিখতে পারি? আর স্টিফেন হকিং তো   সাহিত্য সাধনা করতে নয়, সর্বসাধারণের জানা বোঝার জন্য সরল ভাষায় বিজ্ঞানই লিখছিলেন, আমাদের মতো বিজ্ঞান জ্ঞানান্ধদের চক্ষু উন্মীলনের জন্য । (সত্যি বলতে, বইটা কিন্তু পুরোটা অবৈজ্ঞানিকদের কাছে খুব সহজবোধ্য বলে মনে হয়নি আমার!) মাতৃভাষার সাহিত্যরসের মাধ্যমে বিজ্ঞান পরিবেশন তখনই সার্থক  যদি তার ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য হয়, সাহিত্যের পন্ডিতদের বা বিজ্ঞানের বড়কর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য দোতলার বারান্দায় আটকে না থাকে ।

প্রসঙ্গত মনে পড়ে গেল অনেক দিন আগেকার এক হইচই কান্ড । ষাটের দশকের গোড়ায়, আমরা যখন  সেখানে ছাত্র তখন কেম্ব্রিজের আকাশ বাতাস গরম করে চলেছিল এক তুমুল বিতর্ক, অধ্যাপক, বৈজ্ঞানিক, এবং সার্থক ঔপন্যাসিক সি পি স্নো-এর রীড লেকচার, সেই প্রসিদ্ধ “দ্য টু কালচার্স” বিতর্ক । সেখানে তিনি বলেছিলেন একদিকে বিজ্ঞান, আর একদিকে সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি‌, বিদ্বজনের এই দুই মেরুর মধ্যে সেতুবন্ধন দরকার, বৈজ্ঞানিকেরা ডিকেন্স, শেক্সপিয়র চেনেন না, অবিজ্ঞানীরা বিজ্ঞ্যানের অ আ ক খ জানেন না । সমাজের পক্ষে এটা ক্ষতিকর । এতে ভারসাম্য বজায় থাকে না । বিজ্ঞান এবং কলার মধ্যে হৃদয়ের ভাগাভাগি চাই।  তাতে  কেম্ব্রিজে  সাহিত্যের অধ্যাপক, আর ডাকসাইটে সমালোচক এফ আর লীভিস রেগে গিয়ে আরেকটি বক্তৃতাতে সি পি স্নো-কে সক্রোধ আক্রমণ করে বলেছিলেন, “বিজ্ঞানের জনসংযোগ অফিসার এসেছেন!” আরো কিছুদিন পরে, মানে আজ থেকে  পঞ্চাশ-বাহান্ন বছর আগে,  ওই বইয়ের নতুন সংস্করণে  সি পি স্নো লিখেছিলেন, একটি তৃতীয় কালচারের কথা, যেটা  সম্ভব, যেটি পারবে আরেকটু দূরত্ব কমিয়ে আনতে বিজ্ঞানের সঙ্গে কলার বিভক্তির। এবং যা বর্তমান বিশ্বের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ।

সেটি এখন অনেকটাই কিন্তু সিদ্ধ হয়েছে, বিশেষত মার্কিন দেশে, তৃতীয় কালচারের উৎপত্তি হয়েছে,  লিখিত  হচ্ছে  সর্বজনগ্রাহ্য বই যা  বিজ্ঞানের সঙ্গে সাহিত্যের  সেতুবন্ধনের কাজ করে। সহজ সাবলীল ভাষায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে জনগণের বোধগম্য ক’রে প্রচুর মধ্যপন্থী, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান বিষয়্‌ক, পাঠসুখকর্‌, আকর্ষণীয়, সচিত্র, সহাস্য বই লেখা হচ্ছে। তুমি আমি যে কেউ পড়লেই বৈজ্ঞানিক সত্য বা   সমস্যাটির মুখ  চিনে নিতে পারবো জীবন থেকে। কিন্তু তাকে কি আমরা সাহিত্য বলব? না, বিজ্ঞান বিষয়ক সরল গদ্য রচনাকে মাতৃভাষায়  বিজ্ঞানচর্চাই বলব? এই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই।

আমাদের বিজ্ঞানভাষ-  মাতৃভাষায় বিজ্ঞানের চর্চা চালু করুক, নতুন ভাষা সৃষ্টি করুক, সাহিত্যের সাঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধুক, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে বিজ্ঞান খুঁজতে বেরুনোয়  আমার আপত্তি। ”প্রাণে খুশির ঢেউ জেগেছে” কি সহসা হরমোনের তরঙ্গায়িত হবার  বর্ণনা? কিংবা “আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে হেরে মাধুরী”-কে কি জগৎবিচ্ছিন্ন  ডিপ্রেশনের মনোরোগ বলবেন? আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,  বিজ্ঞানকে সাহিত্য করে তোলার শক্তি বাংলার সূক্ষ্মমনা বৈজ্ঞানিকদের আছে, অনেক আধুনিক, বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের চমৎকার বাংলা ভাষণ শুনেছি, অপূর্ব বাংলা নিবন্ধ পড়েছি। উপকৃত হয়েছি। কিন্তু তার বিপরীত গতি, অর্থাৎ সাহিত্যের মধ্যে বিজ্ঞানের অনুসন্ধান আমার বোধ বুদ্ধিতে স্পষ্ট নয়। শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিকেরাই ধরতে পারবেন রামধনুর বৈজ্ঞানিক মাহাত্ম্য। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার আমি একশোয় একশো কুড়ি ভাগ সপক্ষে। কিন্তু সেটা হবে আমাদের মতো আমজনতার জন্য। যারা ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক হতে চায় তাদের কিন্তু ইংরিজি ভাষাতেই পড়তে হবে উচ্চশিক্ষার জন্য। তারপরে তারা লিখুক সরল বাংলায় আমাদের জন্য। আমরা সাধারণ মানুষেরা বিজ্ঞান এত কম জানি, এত কম বুঝি, যে নিজেদের  বিজ্ঞান-নিরক্ষর বলেই বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

এখন  ত্রিভুবনের  জন্য সরল শিক্ষাপদ্ধতি বেরিয়েছে, কম্পিউটারের অনুসন্ধান। এখন সবাই ডাক্তার, সবাই বিজ্ঞানী, সবাই সাহিত্য সাধক। যেটুকু দরকার, চেঁছে তুলে নাও।  মোটামুটি  ইংরিজিটা জানলেই  হবে, গভীরে যাবার দরকার নেই। আমাদের  প্রিয় সাংস্কৃতিক অভিযান, বিজ্ঞানভাষ, বাংলার মন বুদ্ধিকে  সেই অন্ধকূপ থেকে মুক্ত করুক। আলোয় নিয়ে চলুক। অভিজিৎ এবং তাঁর সহ-স্বপ্নদর্শীদের অভিনন্দন জানাই।

সম্প্রতি শ্রীজাত’র একটি সুদীর্ঘ কবিতায় জীবনের ছবির মধ্যে বিজ্ঞানভাষ বড় সুন্দর ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। সেটি থেকে সামান্য একটু অংশ এখানে তুলে দেবার লোভ  সামলাতে  পারলাম না। সাহিত্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের এমন স্বচ্ছন্দ  কাব্যিক মিলন  তো সহজে চোখে পড়ে না। ( রবীন্দ্রনাথের অবিশ্যি অনেক উদাহরণ আছে!) কিন্তু একে আপনি কবিতায় বিজ্ঞান চর্চা বলবেন?  না  শুধুই  জীবনের গভীরে নেমে উৎসারিত সৎ কবিতা? কবিতার নাম, রোদছায়াগ্রাম।

“আমাদের ছিল কথা বলবার কথা
আর ছিল কিছু শোনানোর মতো গান।
পাথরের মুখে শ্যাওলা চুলের জটা
আপাতত তাতে বন্ধক রাখি প্রাণ।
উঠি যদি, কোটি প্রস্তর যুগ  ঠেলে?
নেমে আসি নিচে? লাভামুখ খুলে যায়।
মাটি খুঁড়ে যদি শাব্দ করোটি মেলে,
বুঝে নিও ছিল বলারই অভিপ্রায়।
হয়তো এখন জীবাশ্ম হয়ে আছি,
সাবধানে ঘোরে  প্রত্নতাত্ত্বিকেরা
ছিলাম কখনো কথাদের কাছাকাছি
এখন যেখানে রক্ষকদের ডেরা ।
যদি বা একটি শব্দও খসে পড়ে
তা থেকে আবার জন্মাই চুপিচুপি—“

এই পুনর্জন্মের মন্ত্রেই শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞানের গাঁটছড়া বাঁধা।