কীটপতঙ্গের ক্ষতস্থানে কীভাবে ‘রক্তপাত’ বন্ধ হয়

কীটপতঙ্গের ক্ষতস্থানে কীভাবে ‘রক্তপাত’ বন্ধ হয়

মানুষের সংবহন কলা হল রক্ত। যার প্রধান উপাদান রক্তরস ও রক্তকোশ- লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা। কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে সংবহন হয় হিমোলিম্ফের মাধ্যমে। হিমোলিম্ফ জল, অজৈব লবণ- সোডিয়াম, ক্লোরিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং জৈব যৌগ -কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং লিপিড দ্বারা গঠিত। এর অক্সিজেন পরিবহনকারী অণু হল হিমোসায়ানিন। হিমোলিম্ফে ইমিউনিটির জন্য অ্যামিবার মতো হিমোসাইটস থাকে যা রোগ জীবাণু ধ্বংস করে।
রক্তের মতোই হিমোলিম্ফ শরীরের বাইরে খুব দ্রুত জমাট বাঁধে। কিন্তু কীভাবে তা জমাট বাঁধে তা বিজ্ঞানীদের বিশেষ জানা ছিল না। মেটিরিয়াল সায়েন্টিস্টরা ফ্রন্টিয়ার্স ইন সফ্ট ম্যাটারে কীভাবে ক্যারোলিনা স্ফিংস মথের শুঁয়োপোকার হিমোলিম্ফ জমাট বাঁধে তা দেখিয়েছেন। কনস্ট্যান্টিন কর্নেভ, ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও তার সহযোগীরা প্রত্যেকটা শুঁয়োপোকাকে প্লাস্টিকের মধ্যে আলাদা করে রেখে, তার ফাঁক দিয়ে দিয়ে প্রতি শুঁয়োপোকার সিউডোলেগের একটায় সামান্য ক্ষত করেছিলেন। সেখান থেকে যে হেমোলিম্ফ চুঁইয়ে পড়ছিল তা একটা ধাতব বল দিয়ে স্পর্শ করে তা দূরে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাতে একটা হেমোলিম্ফ ‘ব্রিজ’ তৈরি হয়েছিল, যা প্রায় দুই মিলিমিটার লম্বা এবং কয়েকশ মাইক্রোমিটার চওড়া। এরপর এটা সরু হয়ে ভেঙে গিয়ে ছোটো ছোটো ফোঁটায় পরিণত হয়। কর্নেভ এবং দল এই বিষয় বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করার জন্য একটা হাই ফ্রেম রেট ক্যামেরা এবং ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে দেখেছেন।
হিমোলিম্ফ দুধাপে জমাট বাঁধে। প্রথমত, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, তাদের পাতলা, জলের মতো হেমোলিম্ফ ‘ভিসকোয়েলাস্টিক’ বা পিচ্ছিল হয়ে যায় আর ফোঁটা ফোঁটা হেমোলিম্ফ ক্ষতস্থানে ফিরে আসে। এর পরের ধাপে হিমোসাইটস ক্ষত পৃষ্ঠে একত্রিত হয়ে আবরণ তৈরি করে। এটা হিমোলিম্ফ ফিল্মকে জড়িয়ে ক্ষতকে সিল করে একটা কঠিন আবরণে পরিণত করে। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়ায় হিমোলিম্ফের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এই আবিষ্কার মানুষের ক্ষতস্থানের রক্ত দ্রুত-কার্যকরভাবে জমাট বাঁধার কৌশল দেখায়। গবেষকরা জানিয়েছেন এই বায়োকেমিস্ট্রি অনুলিপি না করলেও, এমন ওষুধের নকশায় মনোনিবেশ করা যায় যা রক্তকে একটি ভিসকোইলাস্টিক উপাদানে পরিণত করে রক্তপাত বন্ধ করতে পারে।