কীটপতঙ্গ থেকে নিজেকে বাঁচাতে গাছের কৌশল

কীটপতঙ্গ থেকে নিজেকে বাঁচাতে গাছের কৌশল

স্পাইডার মাইট হল মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের মধ্যে একটা, যারা ১০০০ টার বেশি গাছপালাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে, তার মধ্যে ১৫০ টার মতো ফসল রয়েছে। খালি চোখে বিশেষ দেখা সম্ভব নয় এত ক্ষুদ্র এই কীট উদ্ভিদে ছিদ্র করে উদ্ভিদের কোশ চুষে খেয়ে শুকনো করে দেয়। খুব দ্রুত প্রচুর পরিমাণে এই ধ্বংসাত্মক কীট বৃদ্ধি পেয়ে বাগান, বাগিচা শিল্প, বাড়ির গাছপালা নষ্ট করতে পারে। এরা শাকসবজি, ফল অন্যান্য ফসলের ফলন হ্রাসের জন্য দায়ী।
গাছের পাতায় থাকা সূক্ষ ছিদ্র যা স্টোমাটা নামে পরিচিত, তা উদ্ভিদের গ্যাস বিনিময় ও বাষ্পমোচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জলের অভাব হলে, গাছপালা তাদের স্টোমাটা বন্ধ করে বাষ্পমোচন রোধ করে। স্টোমাটা বন্ধ করতে গাছ খরা স্ট্রেস হরমোন ABA তৈরি করে। স্টোমাটা বন্ধ হয়ে গেলে মাকড়সার মাইটের মতো পুষ্টি-চুষক কীটপতঙ্গের প্রবেশ পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ খোলা স্টোমাটার ছিদ্র দিয়ে এফিড এবং মাইটের মতো কীটপতঙ্গ তাদের শোষণ অঙ্গ স্টাইলেট প্রবেশ করিয়ে সাব-এপিডার্মাল কোশ থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ উপাদানগুলো শোষণ করে।
আগে দেখা গিয়েছিল কীতপতঙ্গ আক্রমণ করলে উদ্ভিদের স্টোমাটা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু এর পেছনে সঠিক কারণ জানা ছিলনা। স্পেনের সেন্টার ফর প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জিনোমিক্স এবং সেন্সবারি ল্যাবরেটরি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ফ্লুরোসেন্ট বায়োসেন্সর, যা সেলুলার স্কেলে উদ্ভিদের হরমোনের ঘনত্বের ক্ষুদ্র পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে তা ব্যবহার করে দেখেছেন কীভাবে আরবিডোপসিস থালিয়ানা উদ্ভিদ মাকড়সা, টেট্রানিচাস ইউট্রিসি-এর আক্রমণে প্রতিক্রিয়া জানায়। প্ল্যান্ট ফিজিওলজি জার্নালে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন গাছ অবিলম্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে, খরার সময়ে তৈরি হওয়া হরমোন কাজে লাগিয়ে মাকড়সার মাইটকে উদ্ভিদের কলাতে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং ফলস্বরূপ, কীটপতঙ্গের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এই খরা হরমোন অ্যাবসিসিক অ্যাসিড (ABA), মাকড়সার বা মাইট দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ৫ ঘন্টার মধ্যে উদ্ভিদের প্রবেশদ্বার বন্ধ করতে শুরু করে দেয়। মাইটের আক্রমণ উদ্ভিদ কীভাবে শনাক্ত করে ABA জমা করে, তা মাইটের খাওয়ার কম্পন, মাইটের লালা প্রোটিন, মাইট থেকে উত্পাদিত রাসায়নিক, উদ্ভিদ কোশের ক্ষতির মতো কোনো কারণ হতে পারে। গবেষকদের মতে এই প্রাথমিক ট্রিগার শনাক্ত করণ ফসলের নতুন চিকিত্সা বিকাশের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে আগে থেকেই কীটপতঙ্গের আক্রমণের পূর্বে গাছকে সুরক্ষা দেওয়া যায়।