ঘুমের সাতকাহন

ঘুমের সাতকাহন

ঘুম এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক জটিল। এক নতুন গবেষণায় চারটি স্বতন্ত্র ধরনের ঘুমের কথা বলা হয়েছে এবং প্রতিটি কীভাবে ব্যক্তির দীর্ঘকালীন সুস্থতাকে প্রভাবিত করতে পারে তাও প্রকাশ কেরা হয়েছে। যদিও গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে কম ঘুম দীর্ঘস্থায়ী কিছু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ, তবে বেশিরভাগ গবেষণায় ঘুমের একটি নির্দিষ্ট ধরনের উপর কাজ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণায় ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এবং পরে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মোট ৩৬৮৩ জন অংশগ্রহণকারীর ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। গবেষকদের মতে, ঘুমের প্রতিটি ধরন আমাদের স্বাস্থ্যকে আলাদা আলাদাভাবে প্রভাবিত করে। তারা আরও দেখেছে যে সময়ের সাথে সাথে মানুষের ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করার সম্ভাবনা কম। এই ফলাফল আরও ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করা খুব কঠিন কারণ ঘুম আমাদের সামগ্রিক জীবনধারার সাথে যুক্ত। গবেষকরা চারটি স্বতন্ত্র ঘুমের ধরন চিহ্নিত করেছে। যাদের ঘুম গাঢ়, তাদের সময় মেনে, নিয়ম করে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে। রাতের বেলা ভালো ঘুমের ফলে তারা সারা সকাল সতর্ক থাকে, রাতে নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যায়, ঘুম সম্পূর্ণ হলে ঝটপট উঠে পড়ে এবং ঘুমের সময়ও বেশ পর্যাপ্ত। এছাড়া এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে যারা সপ্তাহ শেষে তাদের কম পরিমাণে ঘুম পুষিয়ে নেয়। ইংরেজিতে এদের বলে ক্যাচ-আপ স্লিপার। তাদের ঘুমের সময় সাধারণের তুলনায় কম, কিন্তু তারা সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনগুলোতে ঘুমিয়ে থাকে। তৃতীয় ধরনের মধ্যে রয়েছে সেই সব ব্যক্তিরা যারা অনিদ্রায় আক্রান্ত। এদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, ফলত এরা দিনের বেলা ক্লান্ত থাকে এবং এদের রাতেরবেলায় ঘুম আসতে অনেক সময় লাগে। চতুর্থ ধরনে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের ইংরেজিতে বলে ন্যাপার, যাদের ঘুমের ধরন ভালো এবং দিনেরবেলায় অল্প সময়ের জন্য ঘুমায় বা দিবানিদ্রা যায়। দশ বছরের বেশি সময় ধরে অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস এবং হাতাশায় ভোগে। পরিসংখ্যান অনুসারে বয়স্ক এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ঘুমের ধরন ভালো ও তারা দিবানিদ্রা যায়। আবার যারা চাকরির নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়েছেন তাদের অনিদ্রা দলে থাকার সম্ভাবনা বেশি। গবেষকদের মতে, ভালো ঘুমের উপকারিতা এবং ও কম পরিমাণে ঘুম এবং খারাপ স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র সম্পর্কে মানুষদের সচেতন করার প্রচেষ্টা দরকার। স্মৃতি থেকে সৃজনশীলতা সব ক্ষেত্রেই ঘুমের প্রভাব অপরিসিম। ঘুমও পরিবর্তনযোগ্য, তাই, যদি আমরা প্রতিদিন ঘুমের সময় বা ধরনকে উন্নত করতে পারি, তাহলে কয়েক মাস বা এমনকি কয়েক বছর পরে আমরা তার ফলাফল দেখতে পাবো। ঘুমের উন্নতির জন্য রাতে বিছানায় সেল ফোন ব্যবহার না করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং শেষ বিকেলে কফি এড়িয়ে যাওয়া কার্যকারী প্রমাণ হতে পারে।