নকল হাসি কী সত্যি আনন্দ দেয়?

নকল হাসি কী সত্যি আনন্দ দেয়?

মন খারাপ করছে আর মন ভালো করার কোনো উপায় নেই, গবেষকরা বলছেন তখন নিজেকে খুসি করার জন্য নকল হাসি হেসে দেখতে পারেন, মন একটু ভালো হতে পারে। কিন্তু সত্যি কি জোর করে হাসলে আপনি আনন্দ পাবেন? মেরি ক্রস, পেন স্টেটের বিহেভিওরাল হেলথ-এর প্রফেসর জানিয়েছেন এটা তর্কমূলক বিষয় হলেও দেখা গেছে ল্যাবের নিজস্ব পরিমণ্ডলে জোর করে হাসি মুড ভালো করতে সাহায্য করে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী নিকোলাস কোলস যিনি আবেগ নিয়ে গবেষণা করেন এবং হাসি নিয়ে গবেষণার প্রধান লেখক ব্যাখ্যা করেছেন, এটা একটা কুকুরছানার ছবি দেখার সময় হাসি এবং একটি ফাঁকা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাসির মধ্যে পার্থক্যের মতো। হাসি কুকুরছানা সম্পর্কে আপনি কতটা আনন্দ বোধ করেছেন সেই আনন্দ কেবল বাড়ায় না, নিরপেক্ষ প্রেক্ষাপটে আপনার খুশি হওয়ার সেরকম কোনো কারণ না থাকলেও আপনাকে খুশি করতে পারে।
২০১৯ সালে সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন-এ মেটা অ্যানালিসিস প্রকাশিত হাসি শুধুমাত্র আনন্দ বাড়ায় না, তা আনন্দ তৈরিও করে। কোলস বলেন, মেটা-বিশ্লেষণের ফলাফলগুলো বিশেষ শক্তিশালী ছিল না, কারণ তা বেশিরভাগই পুরানো, তর্কযোগ্য গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, যেখানে বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। অন্য গবেষণায় এর বিপক্ষেও যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা হলেও তা প্রতিষ্ঠিত করা যায় নি। তাই কোলস এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল জড়ো করেন, যার নাম দ্য মেনি স্মাইলস কোলাবরেশন। তারা ২০২২ সালে নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ারে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা ডিজাইন করেছেন যাতে ১৯টা দেশের ৩৮০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী অংশ নিয়েছেন। গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের তিনটে ভিন্ন উপায়ে হাসির পোজ দিয়েছেন: একজন হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তির ছবি দেখে আর তার অভিব্যক্তি অনুলিপি করা, কীভাবে হাসতে হয় সে সম্পর্কে পেশিগত নির্দেশাবলী অনুসরণ করা, আর অপরটা হল মুখে একটা কলম ধরে হাসা। হাসার জন্য কেউ কেউ ইতিবাচক ইমেজের দিকে তাকিয়েছিলেন, যেমন কুকুরছানা, আবার কেউ এরকম কোনো ছবির সাহায্য নেননি।
প্রথম দুটো পদ্ধতিতে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ইতিবাচক ছবি দেখা বা না দেখার নির্বিশেষে তাদের আনন্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মুখে পেন দিয়ে হাসার পদ্ধতির ফলাফল অস্পষ্ট ছিল। সামগ্রিকভাবে, সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে নকল হাসিও মানুষকে সুখী করে তোলে। মুখের অভিব্যক্তি আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে এমন ধারণাকে ফেসিয়াল ফিডব্যাক হাইপোথিসিস বলা হয়। এটা হাসি ছাড়াও অন্য ক্ষেত্রেও সত্যি যেমন চিৎকার চেঁচামেচিও মানুষকে রাগান্বিত করতে পারে। মস্তিষ্কে কীভাবে প্রতিক্রিয়া হয় এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন মতামত আছে, যেমন হাসি, আনন্দের জন্য নির্দিষ্ট পথকে ট্রিগার করে, অথবা অপর মত অনুযায়ী মস্তিষ্কের কাছে হাসি মানে আনন্দের সংকেত। ফেসিয়াল ফিডব্যাক একটা নির্দিষ্ট অভিব্যক্তি এবং আবেগের সাথে সম্পর্কিত স্মৃতির কথা ভাবতে বাধ্য করায়। তবে যদি আশেপাশে কিছু ঠিক না থাকে তাহলে হাসি আমাদের মুড ভালো করবে না। মেরি ক্রসের সাথে আমাদের একমত হওয়া ভালো, মাঝেমাঝে হাসি আমাদের যদি মন ভালো রাখে তবে হাসতে ক্ষতি কী?