পারদের মাত্রা বৃদ্ধি ও সি-লায়নে তার প্রভাব

পারদের মাত্রা বৃদ্ধি ও সি-লায়নে তার প্রভাব

আলেউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, রাশিয়া এবং আলাস্কার মধ্যে বিস্তৃত দ্বীপের গুচ্ছ যা বেরিং সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে পৃথক করেছে। এই অঞ্চল স্টেলার সি-লায়নের আবাসস্থল। এখানে ২০১১ থেকে ২০১৮ -এর মধ্য জন্ম নেওয়া স্টেলার সি-লায়নের বাচ্চাদের রক্তে এবং গায়ের লোমে পারদের সম্ভাব্য বিপজ্জনক স্তর ৫০%- এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। পারদ- এক উচ্চ ঘনত্বের “ভারী ধাতু,” যা মানুষ সহ বেশ কিছু প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। মানুষের নানা কাজের ফলে পরিবেশে এর নির্গমন হতে পারে, বা ভূমিকম্পের ফলে আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত হতে পারে, গলিত পারমাফ্রস্টের মাধ্যমেও পরিবেশে আসতে পারে। এই নানা কারণের মধ্যে কোন কারণে খাদ্য জালে এর বৃদ্ধি হচ্ছে তা চিহ্নিত করা কঠিন বলে আলাস্কার টক্সিকোলজিস্টরা জানিয়েছেন। পারদের উপস্থিতির কারনে এদের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে কিনা তা গবেষকরা দেখবেন। ১৯৯০ সালে সি-লায়নকে বিপন্ন গোষ্ঠীভুক্ত করা হলেও তাদের জনসংখ্যা ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু এই অঞ্চলের কোনো স্থানে এদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। সেই হ্রাসের পেছনে কারণ অধ্যয়নের জন্য টেক্সাস ও এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ন্যাশানাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বাণিজ্যিক মৎস্যচাষীদের সাথে যুক্ত হন। এই গবেষণায় তারা দেখতে পান দ্বীপপুঞ্জের একটা অঞ্চলে পারদের ঘনত্ব বেশি। গবেষকরা স্টেলার সি-লায়নের বাচ্চাদের মধ্যে উচ্চ পারদের মাত্রা ও তাদের মায়ের খাবার হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু মাছের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। টক্সিকোলজিস্ট ডঃ ও’হারা বলেন, প্রধান উদ্বেগের কারণ হল ভ্রূণে পারদের উপস্থিতি, যার প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে। পারদের মাত্রা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে প্রভাবিত করতে পারে, পারদ শরীরে ঢুকলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা কমে যায় যাতে সময়ের সাথে সাথে শরীরের কলা ভেঙে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সি-লায়নের মতো জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এরা যখন মাছ শিকার করে তখন দীর্ঘক্ষণ শ্বাস ধরে রেখে জলে ডুব দেয়। দীর্ঘক্ষণ শ্বাস ধরে রাখতে প্রচুর অক্সিজেন ব্যবহার করতে হয়, তাই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস মোকাবিলা করার ক্ষমতা প্রতিদিনের খাদ্য আহরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
টক্সিকোলজিস্ট ডঃ ও’হারার নেতৃত্বে গবেষকদের অনুসন্ধান থেকে সমুদ্রের এই অংশ থেকে পাওয়া মানুষের নানা খাদ্যে এখনও তাৎক্ষণিক ঝুঁকির ইঙ্গিত না পাওয়া গেলেও তারা দেখতে চাইছেন, সমুদ্রের বর্ধিত তাপমাত্রায় আমরা যে মাছ খাই তার মধ্যে পারদ এবং অন্যান্য উপাদানগুলো কীভাবে বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে তারা দেখেছেন সাধারণত যে যে মাছ এ অঞ্চল থেকে আসে তার মধ্যে ১৩ রকমের মাছে বেঁধে দেওয়া মাত্রা থেকে পারদের পরিমাণ বেশি ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের পরিবেশ ও মানুষের সৃষ্ট কারণ কীভাবে এখানকার প্রাণীর মধ্যে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে তা তারা অনুসন্ধান করবেন। তাদের এই গবেষণা সায়েন্স অফ দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট-এ প্রকাশিত হয়েছে।