প্রকৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্য

প্রকৃতি ও মানসিক স্বাস্থ্য

মানুষের উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্ভর করে তার চারপাশের প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অণুজীবের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে যে জীববৈচিত্র্যের ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ৷ পূর্ববর্তী গবেষণায় জানা যায় যে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ, প্রকৃতির কোলে বসবাস মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলে বাস করে। উদাহরণস্বরূপ, যেসব শহুরে বাসিন্দারা সবুজের কাছাকাছি থাকে তাদের বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত দুটি মানসিক ব্যাধি, অবসাদ এবং উদ্বেগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭১% কম। এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে যেসব অঞ্চল গাছপালা, জলাশয়, বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ সেখানাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে কিনা বা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে কিনা। গবেষকরা দেখেছেন সবুজ অঞ্চলে যেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য অনেক বেশি সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য অঞ্চলে যেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ততটা সমৃদ্ধ নয় তার তুলনায় উন্নত হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা এই ইতিবাচক প্রভাবের প্রায় এক চতুর্থাংশ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে দায়ী করেছেন – এবং রিপোর্ট করেছেন এই প্রভাব প্রায় আট ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। গবেষকদের মতে মানসিক সুস্থতার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রসার করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে কৃত্রিমভাবে তৈরি সবুজে ঘেরা বাগান, সুন্দর করে কাটা ঘাসের পার্কে সেই অর্থে জীববৈচিত্র্য কম, সুতরাং মানুষকে সেই এলাকায় বসবাস করতে হবে যেখানে বন্য তৃণভূমি, জলাশয় র‍য়েছে যা বিভিন্ন গাছপালা এবং প্রাণীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় আবাসস্থল গড়ে তোলে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সবুজের কাছাকাছি জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকায় দীর্ঘ সময়ের জন্য বসবাস করতে হবে না, প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিদিনের সংক্ষিপ্ত যোগাযোগও মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সক্ষম হবে। জীববৈচিত্র্য আমাদের ইন্দ্রিয়ের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে, মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে, মানসিক ক্লান্তি দূর করে, এবং বৌদ্ধিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী ব্যক্তিরা শরীরচর্চা এবং সামজিকতা বা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বেশি সময় ব্যয় করে ফলত এন্ডোরফিন এবং অন্যান্য হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ কমাতে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি যেমন অ্যালার্জি এবং হাঁপানি থেকে রক্ষা করে। মানসিক চাপের মাত্রা হ্রাস করে এবং মানসিক প্রফুল্লতা ও সুস্থতা বাড়ায়। অতএব, জীববৈচিত্র্য শুধুমাত্র আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ তাই আমাদের শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অংশ হিসেবে জীববৈচিত্র্যকে অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।