‘ভুতুড়ে রাস্তা’ সরাসরি অরণ্য নষ্ট করে পরিবেশের বিপদ ডেকে আনছে

‘ভুতুড়ে রাস্তা’ সরাসরি অরণ্য নষ্ট করে পরিবেশের বিপদ ডেকে আনছে

ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং নিউ গিনির বন কেটে তৈরি হয়েছে এমন বিরাট দৈর্ঘ্যের রাস্তা পাওয়া গেছে, যা নথিভুক্ত রাস্তার মধ্যে পড়ে না। স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার গবেষকরা এরকম ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা পরিমাপ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক ডাটাবেসের রেকর্ড করা রাস্তার তিন থেকে সাত গুণ বেশি। এই ‘ভূতুড়ে রাস্তা’ চারপাশের বন উজাড় করে গজিয়ে উঠেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে এই উদ্বেগজনক আবিষ্কার সমগ্র বিশ্বের মাত্র একটা অংশের চিত্র তুলে ধরেছে। এই অঞ্চল আমাজন এবং কঙ্গো বেসিনের বাইরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেনফরেস্টের এক বৃহত্তম সম্মিলিত বিস্তৃত অংশ। এই অধ্যয়ন এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন বিশ্বজুড়ে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও বিপজ্জনক টিপিং পয়েন্ট এড়াতে বন উজাড়ের ওপর লাগাম টানা প্রয়োজন যাতে বিপর্যয়কর পরিণতি হ্রাস পেতে পারে। জেমস কুক ইউনিভার্সিটির জেডেন এঞ্জার্ট এবং সহকর্মীরা নেচারে প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, তাদের সম্মিলিত অনুসন্ধান থেকে বোঝা যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান, ‘ভুতুড়ে রাস্তা’গুলো গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনের জন্য অন্যতম সরাসরি হুমকি।
গবেষকরা এবং তাদের ২১০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকের দল ৭০০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রায় ১০ লক্ষ ৪০ হাজার মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার জমির গুগল আর্থ স্যাটেলাইট চিত্র থেকে পাওয়া রাস্তাগুলোকে ম্যানুয়ালি ম্যাপ করেছেন। তাদের বিশ্লেষণ বোর্নিও, সুমাত্রা এবং নিউ গিনির দ্বীপপুঞ্জে রাস্তার একটি বিশাল নেটওয়ার্ক প্রকাশিত করেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ‘ভুতুড়ে রাস্তা’-র মধ্যে রেইনফরেস্টের মধ্যে বুলডোজ করা ট্র্যাক অন্তর্ভুক্ত, যা নথিবিহীন রাস্তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আর পাম অয়েল চাষক্ষেত্রের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ এই ধরনের ‘ভুতুড়ে রাস্তা’র অস্তিত্ব দেখা যায়। অধ্যয়নের লেখক বিল লরেন্স বলেছেন যারা প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন কাঠ, খনিজ বা বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকার করে তারা বন বা ক্ষয়প্রাপ্ত জমির মধ্য দিয়ে এই অবৈধ নথিবিহীন রাস্তা তৈরির সাথে জড়িত হতে পারে। এই ধরনের রাস্তা প্রোটেক্টেড ও নন প্রোটেক্টেড দুক্ষেত্রেই দেখা যায়। কিন্তু প্রোটেক্টেড অঞ্চলে এই রাস্তার বিস্তৃতি রোধের জন্য রক্ষা কবচ থাকা দরকার। তবে দু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অরণ্য উজাড় করে এই রাস্তা তৈরি হচ্ছে, যা এখানকার পরিবেশে সরাসরি আঘাত করছে।