শব্দবাণের দাপটে জর্জরিত পাখিরাও

শব্দবাণের দাপটে জর্জরিত পাখিরাও

আধুনিক জীবনযাত্রায় শব্দ প্রাণীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। বাস বা গাড়ির জোরালো আওয়াজ প্রাণীদের তাদের সঙ্গীর ডাকে সাড়া দিতে বাধা দেয়, সঙ্গীর ডাক গাড়ির শব্দে হারিয়ে যায়, প্রাণীদের স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, এমনকি মৃত্যুহারও বাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি এক নতুন গবেষণা থেকে জানা যায় যে কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে শব্দ শোনার আগেই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। পাখিদের জগতেও শব্দ দূষণ গভীর প্রভাব ফেলে। জেব্রা ফিঞ্চ নামে এক ধরনের পাখি অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। ছোট্ট পাখি ফিঞ্চ মূলত উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দা৷ এরা বিভিন্ন রঙের হয়, এদের মধ্যে রঙের বৈচিত্র লক্ষণীয় আর এরা খুব সুন্দর সুরেলা শিস দিতে পারে৷ সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে জেব্রা ফিঞ্চ পাখিদের পাড়া ডিম এবং তাদের বাসা যদি প্রতিদিন গাড়ির শব্দের সংস্পর্শে আসে তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রজননে হ্রাস লক্ষ করা যায়। এই ক্ষতি শব্দ দূষণের কারণে ঘটেছে এবং এর স্থায়িত্ব অনেক বেশি। গবেষকরা বলছেন, শব্দ দূষণ আমাদের পূর্বের ভাবনাচিন্তার চেয়ে আরও ব্যাপক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা দেখার চেষ্টা করেছেন শব্দ দূষণ কীভাবে জেব্রা ফিঞ্চের বিভিন্ন পর্যায় অর্থাৎ ডিম অবস্থায়, ছানা বা জীবনের উভয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলে। গুরুত্বপূর্ণভাবে, দেখা যায় শুধুমাত্র ডিম বা ডিম ফুটে ছানা হওয়ার পর্যায়ে ট্র্যাফিকের শব্দ ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে এবং পাখিরা যদি উভয় পর্যায়ে শব্দ দূষণের সংস্পর্শে আসে তা আরও ক্ষতিকারক। গবেষকরা দেখেছেন মা পাখির গান শুনে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়ে আসে। কিন্তু যে সব অঞ্চলে শব্দ দূষণ বেশি সেখানে বাইরের গাড়ির আওয়াজে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়ে আসার হার অনেক কম। শব্দ দূষণের মাত্রা যে এলাকায় বেশি সেখানে ১২ দিন বয়সী পাখিদের ওজন ১৪.৫% কম। তাছাড়াও দেখা গেছে এই সব পাখিদের শারীরবৃত্তীয় চাপ অনেক বেশি। এর প্রভাব পাখিদের প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায় অবধি লক্ষ করা গেছে। যে সব অঞ্চলে শব্দ দূষণ বেশি সেখানে জেব্রা ফিঞ্চদের ডিম পাড়ার হারও ৫৯ শতাংশ কম। গবেষকরা দেখেছেন প্রভাবটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মপূর্ব অতিরিক্ত মাত্রায় শব্দ দূষণের জন্য ঘটেছে। শব্দের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে তেমনই প্রাণীকুলেও এর প্রভাব যথেষ্ট ক্ষতি করছে।