শরীর জুড়ে ক্লান্তি না ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমের লক্ষণ

শরীর জুড়ে ক্লান্তি না ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমের লক্ষণ

রাতে ঘুম হয়েছে অথচ সকাল থেকেই শরীরে জড়ো হয় একরাশ ক্লান্তি, চোখে ঘুম। অনেকেরই এমন হয়। কিন্তু কেন এমন হয় তা বোঝা যায় না। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ক্লান্তির নেপথ্যে রয়েছে ‘ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম’ (সিএফএস)। অনেকে বলেন ‘মায়ালজিক এনসেফালোমাইলিটিস (এমই)। সিএফএস-এর আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে কোনো সংক্রমণের পরে ১৭ জন ব্যক্তি প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করছে, তারা এমই/সিএফএস-এ আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের শরীরে বেশ কিছু পার্থক্য ধরা পড়েছে। কয়েক দশক ধরে, অনেক চিকিৎসক এমই/সিএফএস-কে একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা হিসাবে অনুমান করেছিলেন যা তাদের মতে ‘রোগীদের মনে’। তবে এই গবেষণা অনুসারে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বেশ কিছু জৈবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা যেমন মস্তিষ্কের স্ক্যান, ঘুমের সময়, পেশি শক্তি ও বৌদ্ধিক ক্ষমতার পরীক্ষা, ত্বক ও পেশির বায়োপসি, রক্ত পরীক্ষা এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের একটি নিয়ন্ত্রিত ডায়েটেও রাখা হয়েছিল। পূর্ববর্তী গবেষণার মতোই, এমই/সিএফএস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশ্রামের সময় হৃদস্পন্দন বেশি, ইমিউন সিস্টেমেও পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া তুলনামূলকভাবে কম বৈচিত্র্যময় ছিল। এদের পেশি শক্তি ও বৌদ্ধিক ক্ষমতা স্বাভাবিক ছিল। ইমিউন সিস্টেম এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে পরিবর্তন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে। ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডে ক্যাটোকল নামের রাসায়নিকের মাত্রা কম ছিল। ক্যাটোকল স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের টেম্পোরাল-প্যারিটাল জংশনে সক্রিয়তা কম থাকে। এই অঞ্চল মোটর কর্টেক্স অঞ্চলকে চালনা করে, যা আবার শরীরের নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং গবেষকরা মনে করেন এই অঞ্চলটি কাজ না করলে, মস্তিষ্কের, কোনো কাজ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। অন্যদিকে, রোগীদের শক্তি এবং ক্লান্তি সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি পরিবর্তন করতে পারে। এই বিষয়ে আরও গবেষণার মাধ্যমে এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে এই ১৭ জন রোগীর মধ্যে শনাক্ত করা পরিবর্তনগুলো ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমে আক্রান্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যেও দেখা যাবে কিনা, কিন্তু এই গবেষণাটি সেই ভবিষ্যতের কাজের ভিত্তি স্থাপন করে। গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।