শ্বাসনালীতে জল আটকে গেলে যে কোশ আমাদের সুরক্ষা দেয়

শ্বাসনালীতে জল আটকে গেলে যে কোশ আমাদের সুরক্ষা দেয়

এক চুমুক জল খেতে গিয়ে হঠাৎ গলায় জল আটকে বিষম লাগলো আর কাশি শুরু হল, এ ঘটনার সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। জল খাদ্যনালীর বদলে শ্বাসনালীর ভুল পাইপে ঢুকে গেলেই এই বিপত্তি ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে এই পরিচিত, প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়াটি আমাদের শ্বাসনালীতে বিরল, ক্ষুদ্র কোশ দ্বারা প্ররোচিত হয়। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর গবেষণায় এটা আবিষ্কার করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াই ঝু এবং সান দিয়েগোর জিন সান বলেছেন এই অনুসন্ধান শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধির চিকিত্সার জন্য নতুন পদ্ধতির পথ দেখাতে পারে। গবেষকরা পরামর্শ দেন যে দীর্ঘস্থায়ী কাশির চিকিত্সার জন্য বা নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এঁর ওপর গবেষণা কার্যকর হতে পারে। আচমকা তরল বায়ুনালীতে প্রবেশ করলে তা খাদ্যনালী দিয়ে পেটে যাওয়ার পরিবর্তে ফুসফুসের দিকে যায়, আর শরীর তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুরক্ষা প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। শুরু হয় কাফ রিফ্লেক্স, যা বায়ুনালী থেকে তরল বের করে দেয় আর গিলে ফেলার রিফ্লেক্সে স্বাভাবিকভাবে এটা পেটে চলে যায়। এই রিফ্লেক্সগুলি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শ্বাসনালী থেকে যে কোনও তরল বের করে ফুসফুসের সূক্ষ্ম কলাগুলো রক্ষা করে আমাদের শ্বাস নিতে সাহায্য করে। এই প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়াগুলো ব্যর্থ হলে, তরলের মধ্যে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা নিউমোনিয়া নামে পরিচিত। যখন পাকস্থলীর অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়ে তরল ওপরের দিকে উঠে আসে, তখনও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটে। এই রিফ্লেক্সগুলো শ্বাসনালীতে স্নায়ুকে সচেতন করে যা মস্তিষ্কে বিপদ সংকেত দেয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই স্নায়ুগুলোর সাথে ভয়েস বক্সের আস্তরণ বা এপিথেলিয়ামের বিশেষ কোশ এবং বায়ুনালী সাহায্য করে৷ এই কোশগুলো নিউরোএন্ডোক্রিন কোশ হিসাবে পরিচিত, যারা শ্বাসনালী এপিথেলিয়ামের মাত্র ০.৫ শতাংশ স্থান অধিকার করে থাকে।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ইঁদুরের ওপর গবেষণায়, গবেষকরা প্রকাশ করেছেন যে এই নিউরোএন্ডোক্রিন কোশগুলো শ্বাসনালীর ওপরের দিকে জল এবং অ্যাসিড উভয়ই অনুভব করে। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, তারা ATP নামক একটি রাসায়নিক মুক্ত করে যা স্নায়ুকে সক্রিয় করে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। ল্যাবে ইঁদুরের কলাতে দেখা গেছে এই নিউরোএন্ডোক্রিন কোশ থেকে মুক্ত ATP সেনসারি নিউরনগুলোকে গেলা ও কাশির রিফ্লেক্স শুরু করায়। ইঁদুরের পরে গবেষকরা মানুষের ক্ষেত্রে এই কোশের কাজ দেখার চেষ্টা করবেন আর বয়সের সাথে এর কার্যকারিতা কমে কিনা তা দেখবেন।