সমুদ্রের নীচে মৃত্যুফাঁদ

সমুদ্রের নীচে মৃত্যুফাঁদ

মানুষ বর্তমানে মহাবিশ্বকে জয় করার লক্ষ্যে ছুটছে। একের পর এক দেশ মহাবিশ্বে পাড়ি জমানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আসলে, পৃথিবীতে মানুষের জন্য সমাধান করার মতো খুব বেশি রহস্য আর পড়ে নেই। তবু, একেক সময় এমন একেকটি ঘটনা বা আবিষ্কার ঘটে, যা আধুনিক যুগের মানুষকেও বিস্মিত করে। সম্প্রতি, সমুদ্রের তলদেশ খোঁজ মিলল এক মারাত্মক কূপের। সাঁতার কাটতে কাটতে সেই কূপে যে প্রাণীই পড়ে যাক না কেন, মৃত্যুকে এড়ানোর উপায় নেই!
পর্যটনের জন্য বিখ্যাত লোহিত সাগর। আর এই লোহিত সাগরের তলদেশেই একটি ১০ ফুট ব্যাসার্ধের বিরাট মৃত্যু কূপ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, এটি একটি ‘ব্রাইন পুল’ বা লবণের কূপ। সমুদ্রের তলদেশে অনেক সময়ই এরকম কূপ দেখা যায়। সেই এলাকার জলে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশে থাকে। তবে, লোহিত সাগরের তলদেশের এই বিরল ব্রাইন পুলের মতো লবণাক্ত কূপ এর আগে দেখা যায়নি বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর লবণের আধিক্যের জন্যই এই মৃত্যুকূপে একফোটাও অক্সিজেন নেই। অক্সিজেনের অভাবে কোনও প্রকার সামুদ্রিক জীবন ধারণের মতো পরিবেশ নেই কূপটিতে। তাই এই কূপের মধ্যে একবার পড়ে গেলে আর সাঁতার কাটতে হবে না, সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসবে সাক্ষাৎ মৃত্যু।
এমনই দাবি করেছেন মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী। তাঁরাই এই ‘মৃত্যু কূপ’টি আবিষ্কার করেছেন। গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক স্যাম পার্কিস জানিয়েছেন, ব্রাইন পুলটিতে কোনও অক্সিজেন নেই। ফলে অবিলম্বে তা যে কোনও সামুদ্রিক প্রাণীকে মেরে ফেলতে পারে। গবেষণা দলটি লোহিত সাগরের নিচে একটি রিমোট-কন্ট্রোলড আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল বা আরওভি (ROV) নামিয়েছিল। ১,৭৭০ মিটার গভীরতায় লবণের কুপটি পাওয়া যায়। অধ্যাপক পার্কিস বলেছেন, ‘সমুদ্রের তলদেশে এত গভীরে সাধারণত খুব বেশি প্রাণী থাকে না। তবে, ব্রাইন পুলগুলি একটি সমৃদ্ধ মরূদ্যানের মতো। পুরু কার্পেট মতো বিভিন্ন জীবাণু থাকে, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। আর সেটাই অন্যান্য সকল সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য খারাপ খবর হতে পারে।’
‘লাইভ সায়েন্স’ পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধ্যাপক পারকিন্স দাবি করেছেন, তাঁদের এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীদের কাজে আসবে। তাঁর মতে, এই মৃত্যুকূপ নিয়ে গবেষণা করে জানা যেতে পারে যে, কীভাবে লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীকে মহাসাগর তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া ওই লবণাক্ত পরিবেশে যে বিরাট সংখ্যক জীবাণু আবিষ্কার করেছেন তাঁরা, তা চরম পরিবেশে বেঁচে থাকা প্রাণীদের সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে সহায়তা করবে। পৃথিবীতে কতটা চরম অবস্থাতেও প্রাণ ধারণ সম্ভব তা বুঝতে পারলে তবেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহে এবং তার বাইরে অন্য কোথাও জীবনের সন্ধান করা যাবে বলে মনে করেন অধ্যাপক পার্কিন্স। তিনি বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা পৃথিবীতে জীবনের সীমা বুঝতে পারব ন, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যান্য গ্রহগুলির কোনগুলিতে প্রাণ থাকা সম্ভব, তা নির্ণয় করা কঠিন হবে।