স্ট্রোক হওয়ার পর মস্তিষ্কের পুর্নগঠন  

স্ট্রোক হওয়ার পর মস্তিষ্কের পুর্নগঠন  

স্ট্রোক হল একটি প্রাণঘাতী রোগ যা মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। সারা শরীরের মতো মানুষের মস্তিষ্কেও রয়েছে রক্তনালী আর এই রক্তনালীর মাধ্যমেই মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় রক্ত। কোন কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি হলে বা রক্তক্ষরণ হলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থাকেই আমরা স্ট্রোক বলি। এর ফলে মানুষের আচরণ, ব্যক্তিত্ব, স্মৃতিশক্তি, বৌধিক চেতনার যেমন পরিবর্তন ঘটে তেমনি গুরুতর ক্ষেত্রে পক্ষাঘাত ও শরীরের সংবেদনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।

স্কুল অফ মেটেরিয়ালস সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং, যেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চাউনবিন মাও- এর মতে ব্রেন স্ট্রোকের ফলে মানুষের শরীরে যে ক্ষতি হয় তা নিরাময় করা এখনো আমাদের কাছে একটি ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে যদিও হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি, জীবনকে পুনর্বাসনের জন্য প্রশিক্ষণ বা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার চেষ্টা চলছে কিন্তু এই সব পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে রোগীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয় কখনও তা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

থেরাপির সাহায্যে রোগীর মস্তিষ্কেকে আবার আগের মতো সক্রিয় করতে মস্তিষ্কের স্নায়বিক যোগসূত্রগুলি সঞ্জীবিত করা প্রয়োজন। অ্যাঞ্জিওজেনেসিস নামে এক চিকিৎসার সাহায্যে নতুন রক্তজালিকা তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে মস্তিষ্কের নতুন কোষগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করা যায় ও তা পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু আজও এই পদ্ধতিটি আধরাই রয়ে গেছে। রোগীর মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপিত স্টেম সেলের সাহায্যে এই প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হলেও বাস্তবে দেখা গেছে মস্তিষ্কের যে কোষগুলি স্ট্রোকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শরীর যখন সেই মৃত কোষগুলি সরিয়ে দেয়, তখন সেখানে একটি গহ্বর তৈরি হয়। ফলত, প্রতিস্থাপিত স্টেম সেলকে সেখানে যথাযথ জৈবিক সাহায্য দেওয়া সম্ভব হয় না, যাতে স্টেম সেল এই গহ্বরে নতুন কলার পুনর্গঠন করতে পারে।

শূন্যস্থান পূরণের জন্য ভাইরাস

মাও, তাঁর সহযোগী মিংইয়িং ইয়াং ও তাঁদের যেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মীরা রোগ নিরাময়ে ব্যাক্টেরিয়া ফাজের সাম্প্রতিক ব্যবহারে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন একটি ফাজ ভাইরাস তৈরি করেছেন যা স্ট্রোক দ্বারা মস্তিষ্কের     ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিতে অ্যাঞ্জিওজেনেসিস ও নিউরোজেনেসিস এই দুটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হয়েছে।

এই পদ্ধতিতে একটি ১ মাইক্রোমিটার দীর্ঘ, ফাইবারের মতো দেখতে ভাইরাস ব্যবহার করা হয় যা M13 ফাজ নামে পরিচিতি এবং সেটি মানব দেহের জন্য নিরাপদ। ভাইরাসের জিনগত উপাদান একটি ক্যাপসিড বা প্রোটিন শেলের দ্বারা বেষ্টিত , যা আবার  সিগনালিং প্রোটিনে আবৃ্ত থাকে। পরীক্ষাকারী এই দলটি সিগনালিং প্রোটিনটি  পরিচালনা করতে পারেন।

পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাও বলেছেন-  ভাইরাসের DNA-তে RGD নামক একটি বহিরাগত জিন প্রবেশ করা্নো হয়েছে। RGD পেপটাইড তারপরে প্রতিটি প্রধান প্রোটিন কোটের সাথে  যুক্ত করা হয়েছে।  বহিরাগত এই RGD পেপটাইড তারপর ভাইরাসের বাইরের পৃষ্ঠে অধিক ঘনত্বে ছড়িয়ে দিয়ে একটি নতুন ফাজ গঠন করা হয়েছে যাকে R-ফাজ বলে।

পরীক্ষাকারী দলটি তারপরে সিল্ক প্রোটিন থেকে তৈরি মাইক্রোকণিকার ওপর R –ফাজের প্রলেপ দিয়ে ও তাতে  নিউরাল স্টেম সেল ভরে তাকে মস্তিষ্কের গহ্বরে প্রবেশ করায়। মাইক্রোকণাগুলি স্টেম কোষগুলিকে বংশবৃদ্ধি করার জন্য সহায়তা করে আর R -ফাজগুলি  তার সিগনালিং প্রোটিনের সাহায্যে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্যে করে রক্তনালী গঠনকে উদ্দীপিত করে, যা স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।

দলটির মতে ক্লিনিকাল প্রয়োগের আগে এখনও বেশ কয়েকটি বাধা রয়েছে এবং তাদের আরও পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগবে পরীক্ষা করার জন্য। মাও আরও বলেছেন যে – এখনও বড়ো প্রাণীদের উপর  ভাইরাল ন্যানোফাইবার প্রয়োগ করে দেখতে হবে, এবং তারপরেই মানব দেহে প্রয়োগ করে এর ফলাফল দেখতে হবে।

স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলাফল অত্যন্ত  আশাব্যঞ্জক,  কিন্তু মাও-এর মতে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। যেহেতু ফাজ ন্যানোফাইবারগুলির পৃষ্ঠে কার্যত যে কোনও কার্যকরী পেপটাইড দেখাতে পারে, ফলে এধরনের ভাইরাল ন্যানোফাইবার স্ট্রোক ছাড়াও অন্যান্য অনেক রোগের চিকিত্সার জন্য জৈব উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।