ভাষা বৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্যের পরম্পরা সম্বন্ধ/৩

ভাষা বৈচিত্র্য ও জীববৈচিত্র্যের পরম্পরা সম্বন্ধ/৩

[*ভাষার বৈচিত্র্যের ও জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্দ। কোনো জনজাতি বিপন্ন বা অবলুপ্ত হয়ে গেলে যেমন জীববৈচিত্র্যের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে, তেমনই কোনো প্রজাতি বিপন্ন হলে মানুষের জীবনেও তার প্রভাব পড়ে।]

ভাষিক আত্মপরিচয় সম্বন্ধে বোধ মূলত শহুরে মানুষের মধ্যে বেশি গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ গ্রামসমাজের মানুষ তাদের ভাষা পরিচয় নিয়ে আজও মোটেই চিন্তিত নয়। যতদূর গবেষণা হয়েছে বলে জানি, তাতে গ্রামসমাজকেই ভাষার বৈচিত্র্যের আকর হিসেবে ধরা হয়। শহরের বহুভাষিকতা অন্যজিনিস। সেখানে অনেক ভাষার লোক এসে রুজিরোজগারের তাগিদে বসবাস করে ঠিকই কিন্তু তাকে ভাষা বৈচিত্র্য বলে না। যেহেতু ভাষা বৈচিত্র্য কতটা গভীর কতটা কম কতটা বেশি – ইত্যাদি মাপার কোনো সংখ্যাতাত্ত্বিক সরঞ্জাম নেই – সেইকারণে আমি গ্রামীন জনসংখ্যার দশকী (২০১১) বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছি দ্বিতীয় ক্ষেত্রে। টেবিল-২ সেই দ্বিতীয় পরীক্ষার তথ্য হাজির করেছে দেখতে পাবেন।

এই দ্বিতীয় পরীক্ষায় পিয়ার্সনের r-এর ফল দাঁড়িয়েছে -০.৯৩৩৯ অর্থাৎ গ্রামীন জনসংখ্যার বৃ্দ্ধির সঙ্গে অন্যান্য ভাষার পরম্পরা সম্বন্ধ চরম ঋণাত্মক অর্থাৎ স্ট্রং নিগেটিভ কোরিলেশন, যার সহসম্বন্ধ গুণাঙ্ক অর্থাৎ হাই কো-এফিশিয়েন্ট অফ ডিটারমিনেশনের মান কিন্তু আগের মতোই উচ্চ। ০.৮৭২২ (অর্থাৎ r2 = 0.8722)।

একটা সাধারণ সূত্র এর থেকে আমি গ্রহণ করেছি, একটা ভাষার ভাষীর সংখ্যা বহু পরিমান হলে বা মোটের ওপর সেই পরিমান তাৎপর্যপূর্ণ হলে তা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তপশিলে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এইরকম ভাষার ক্ষেত্রে স্বভাবতই রাজ্যের মূল লক্ষ্য এবং উন্নয়ন ইত্যাদি নীতির সঙ্গে ওই ভাষার সম্পর্কও চরম। ফলে, তালিকার বাইরের ভাষাগুলো তালিকাভুক্ত ভাষার চাইতে অনেক কম পরিকল্পিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত। সেইকারণের সেগুলোর মধ্যে বিচিত্রতা বেশি। কিন্তু এখনকার বেশির ভাগ গ্রামই শহরমুখী – তার উন্নয়নের ধারনা, শিক্ষার ধারণা, অর্থনীতির ধারণা – সমস্তই শহরের মতন। তাই সেখানকার জনসংখ্যার বৃদ্ধি সঙ্গে ভাষা বৈচিত্র্যের পারম্পর্য বিপ্রতীপ। গ্রামীন শিশুগণ যে ইস্কুলে পড়ে সেখানে তো পড়ানো হয় রাজ্যের প্রধান ভাষাগুলোই। তাই আমার দ্বিতীয় পরীক্ষার ওই ফল। অথচ অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্যের অভাব নেই।

এই গ্রহের সুস্বাস্থ্যের জন্য জৈব বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার বৈচিত্র্যকে রক্ষা করাও জরুরি। একদিকে গবেষকরা চিন্তিত ভাষার ও প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে বলে। অন্যদিকে নৃ-কৌম তথা সাংস্কৃতিক তথা ভাষা গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকল মানুষকে বাধ্য করা হচ্ছে একক এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে সংলাপ চালানোর জন্য। যে মাধ্যমকে করে তোলা হয়েছে অনিবার্য। কীভাবে ও কেন – তার হিসেবে কেউ রাখছেন কি?

সারণী ১: এই বারোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার তুলনায় অন্যান্য ভাষার সংখ্যার যে হার সেই তথ্য আমি জোগাড় করেছি ২০১১ সালের আদমসুমারী থেকে এবং রাজ্যের মোট আয়তনের তুলনায় অরণ্য অধ্যুষিত অঞ্চল বা বনানীর হারের তথ্য জোগাড় করেছি ২০১৫ সালের কম্পেন্ডিয়াম অফ এনভায়রনমেন্ট স্ট্যাটিসটিক্স থেকে।

সারণী ২: এই বারোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার তুলনায় অন্যান্য ভাষার সংখ্যার যে হার সেই তথ্য গ্রামীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির দশকী হারের তথ্য (চলতি দশকে) আমি জোগাড় করেছি ২০১১ সালের ভারতীয় আদমসুমারীর পরিসংখ্যান থেকে।