গভীর সঙ্কটে পিথাগোরাস

গভীর সঙ্কটে পিথাগোরাস

পিথাগোরাস তাঁর নামে বিখ্যাত উপপাদ্যটি আবিষ্কার করেছিলেন মোটামুটি খ্রিষ্টের জন্মের পাঁচশ বছর আগে৷ সেখানে বলা ছিল যে কোনও সমকোণী ত্রিভুজের অতিভূজকে বাহু হিসেবে ধরে গড়ে তোলা বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল তার অন্য দুই বাহুর ওপর গড়ে তোলা দুই বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সঙ্গে সমান হয়। স্কুলস্তরের পাঠ্য জ্যামিতি বইয়ে এই উপপাদ্যটি পিথাগোরাসের নামেই প্রচলিত হয়ে আছে আবহমান কাল ধরে। কিন্তু সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, অতি প্রাচীন ব্যাবিলনের মানুষদের এই উপপাদ্যের নিয়মটা জানা ছিল তারও হাজার বছর আগে থেকেই।
ড্যানিয়েল এফ মেনসফিল্ড অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যাথেমেটিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্সের এক গবেষক। সম্প্রতি তিনি ‘ফাউন্ডেশনস অব সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন তাঁর গবেষণার ফল। যেখানে জানাচ্ছেন যে প্রাচীন ব্যাবিলনে, সাড়ে তিন হাজার বছরেরও বেশি আগে, মাটির তৈরি ট্যাবলেট বা চ্যাপটা এক ধরনের পাত ব্যবহৃত হত যার গায়ে আঁকা থাকত নানা ধরনের আঁকিবুকি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জানা যাচ্ছে, অত প্রাচীন যুগের মানুষেরা জমির মাপজোক করতে পারতেন নিখুঁতভাবে। বলতে গেলে ওটাই ব্যবহারিক জ্যামিতির প্রয়োগ হওয়ার সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ। এই পাতগুলো, যার পোশাকি নাম এস আই ৪২৭, গণিতজ্ঞদের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ নথি। ১৮৯৪ সালে এক ফরাসি গণিতজ্ঞ ভিনসেন্ট শেইল এই পাত খুঁজে পান এখনকার ইরাকের কাছের সিপার নামে এক জায়গা থেকে। যদিও দীর্ঘদিন এই পাত রয়ে গিয়েছিল গবেষকদের নজরের বাইরে। ড্যানিয়েল দেখিয়েছেন যে অতি প্রাচীন ব্যাবিলনের মানুষেরা যে পরিমাপের গণিতে বেশ দক্ষ ছিলেন, তার প্রমাণ ওই পাত। যা ব্যবহার করতেন ওইসব দেশের জরিপকারীরা। দুজন ব্যক্তির মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হলে ওই পাতকে কাজে লাগানো হত সমস্যার সমাধানে। জরিপকারীরা বিভিন্ন জমিকে বিভিন্ন সুবিধাজনক মাপে ভেঙে নিতেন, যার এক একটা হয়ত হত ত্রিভুজ বা আয়তক্ষেত্র, বা বর্গক্ষেত্র। আর ওইসব নির্দিষ্ট আকারের জ্যামিতিক চিত্রকে পরিমাপ করতে গিয়েই তাঁরা বানিয়েছিলেন এক নিয়ম, যেখানে সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্যের বর্গ তার লম্ব আর ভূমির দৈর্ঘ্যের বর্গের সমষ্টির সমান হয়। পিথাগোরাসও এমনই কথা বলবেন, তবে আরও হাজার বছর পর।
তাই এই উপপাদ্যকে আদৌ পিথাগোরাসের নামে পরিচিত রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধান্বিত। গণিতের বইপত্রে উপপাদ্যের আবিষ্কর্তা হিসেবে পিথাগোরাসের নামটা বদলায় কি না, এখন সেই অপেক্ষা।