চারা পুঁতলেই বিনা পয়সায় ভর্তি

চারা পুঁতলেই বিনা পয়সায় ভর্তি

এ এক অভিনব নিয়ম!
বিহারের এক কোচিং সেন্টারে ছাত্রছাত্রীদের বিনা পয়সায় ভর্তি হতে একটিমাত্র শর্ত দিয়েছে। শর্ত হল ওই আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককে ১৮ টি গাছের চারা পুঁততে হয়।
এই ভাবে সবুজ আন্দোলনে সামিল হয়ে বিহারের ওই প্রতিষ্ঠান ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় এক লক্ষ দশ হাজার গাছের চারা লাগাতে সাহায্য করেছে। তাঁর মধ্যে বেশ কিছু গাছ বড় হয়ে গিয়েছে। এলাকায় মাটির নীচে জলের স্তরও অনেক উন্নত হয়েছে।
এই কোচিং সেন্টারটি শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে। একদিকে যেমন পরিবেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে, তেমনই এই সবুজ উদ্যোগের ফলস্বরূপ হিসেবে দরিদ্র পরিবারের ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছেন।

সমস্তিপুর জেলার রোজেরা ব্লকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তখন থেকে ১১০,০০০ চারা রোপণে সহায়তা করেছে। গাছগুলি মূলত ফলের গাছ।
এই সব গাছ উত্তর বিহারের সমস্তিপুর , বেগুসারাই, দারভাঙ্গা এবং খাগারিয়া জেলায় পোঁতা হয়েছে।

প্রতিটি ছাত্রকে ১৮ টি চারা রোপণের জন্য বলার কারণ ?  এই  উদ্যোগের  পেছনে মূল ব্যক্তিটি  হলেন একজন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কর্মী রাজেশ কুমার সুমন । তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির সারা জীবনে শ্বাস নেওয়ার জন্য  যতটা অক্সিজেন লাগে , ঠিক ততটা অক্সিজেন এই ১৮ টি গাছ থেকে উৎপন্ন হয়।
শিক্ষার্থীদের তাঁদের নিজস্ব জমিতে আর ভূমিহীন হলে সরকারি জমিতে চারা বসাতে হয়।
কোচিং সেন্টারে নথিভুক্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং সরকারি চাকরি পেয়েছেন।
এক শিক্ষার্থী রওশন কুমার মুম্বাইয়ের আয়কর দফতরে চাকরি পেয়েছেন, ‘১৮ টি চারা লাগিয়ে আমি ওই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পেরেছি। না হলে বেঁচে থাকার জন্য
বাবার জন্য রাস্তার ধারে মসলা বিক্রি করতাম।’ রওশন বলেন, ‘মারাত্মক আর্থিক সঙ্কট পেরিয়ে এখন আমি যেমন জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, তেমনই পরিবেশে সবুজও ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।’
অমরজিৎ দাসও কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল আমার লাগানো চারা দিয়ে সেলফি পাঠাতে। ১৮টি চারা লাগানোর পর আমাকে ভর্তির জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল।’ অমরজিৎ এখন ভারতীয় রেলের গ্রুপ ডি কর্মচারী।  তাঁর বাবা দিনমজুর।
কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা অন্যত্র নিযুক্ত এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য তাদের পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান করেন।  তারা সকালে এবং সন্ধ্যায় দুই ঘন্টা করে ক্লাস নেন। ভর্তি ফি হিসেবে গাছপালা রোপণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝানো।