সব ‘কেন’-র উত্তর চাই আমি

সব ‘কেন’-র উত্তর চাই আমি

সব ‘কেন’-র উত্তর চাই আমি

আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী। বিজ্ঞান নিয়েই ভবিষ্যতে পড়াশোনা করতে চাই। বিজ্ঞান আমাকে শিখিয়েছে সংস্কারমুক্ত হতে ও যুক্তিবাদী হতে। আগে মানুষ জানতো না কি করে দিনরাত্রি হয়, কেন ঋতু পরিবর্তন হয, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, না পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। সবই জানা গেছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। সভ্যতা তার প্রতিটি ধাপ এগিয়েছে বিজ্ঞানের হাত ধরেই। বিজ্ঞান গোটা পৃথিবীতে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। আজ আমাদের নিজেকে বিশ্বনাগরিক ভাবতে কোন দ্বিধা নেই। অবশ্য অনেকে বিজ্ঞানকে বিধ্বংসী কাজে ব্যবহার করে। তবে সেগুলো ব্যতিক্রম। তার কল্যাণময় দিকগুলোই আমার অস্তিত্বকে নাড়া দেয়।

এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞান পড়ে সৃষ্টির অনেক রহস্য আমার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। আমি আরো ,আরো ,আরো অনেক কিছু জানতে চাই। তাই আমাকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তেই হবে। আমি সব ‘কেন’র উত্তর চাই। কারণ কোন ধোঁয়াশা আমি পছন্দ করিনা। এর জন্যই আমি বিজ্ঞানের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অনেক উন্নতি করেছে। আমি চাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরও উন্নতি হোক। ভাইরাস নিয়ে আরও গবেষণা হোক যাতে অকালে কোন প্রাণ ঝরে না পরে। আমাদের গরিব দেশ। তাই আমি চাই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে,তাদের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণ করার পথ খুঁজে বের  করতে। যে দেশের লোক না খেতে পেয়ে মরে যায়, যে দেশে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যায় শয়ে শয়ে, যে দেশে বেরোজগার লোক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, সেদেশে মঙ্গল যান পাঠানোর উদ্যোগ না নিয়ে,সেসব কিভাবে নিরসন করা যায় বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে সেটা ভাবা উচিত।

আমি ছোট থেকেই কোন কিছুর প্রমাণ না পেলে সেটা বিশ্বাস করিনা। খারাপ লাগে যখন দেখি অনেক শিক্ষিত লোকও কুসংস্কারমুক্ত হতে পারে না, ফিরে যায় আবার সেই মধ্যযুগেই । আজ যখন আমরা সবকিছু জেনে গেছি , জেনে গেছি কিসের জন্য কি হয়, তখন কেন অলৌকিকতাকে বিশ্বাস করব? আমার দৃঢ় ধারণা সবকিছুর পেছনেই কিছু না কিছু কারণ থাকে। অনেক কিছুই আমাদের জানা হয়ে গেছে। অনেক রয়ে গেছে অজানা। আমি তাই বিজ্ঞান পড়ে ,বৈজ্ঞানিক হয়ে সেই রহস্য উদঘাটন করতে চাই। আমি চাই একটি জীর্ণ লোকাচারমুক্ত সমাজ, যেখানে থাকবে না কোন ধর্ম, বর্ণ ,ভাষার বিভেদ।আমাদের একমাত্র পরিচয় হবে যে আমরা মানুষ। তার জন্য প্রত্যেককে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। তাই আমি বিজ্ঞানকেই বেছে নিয়েছি যাতে আমি ভবিষ্যতে একজন সম্পূর্ণ সংস্কারমুক্ত , উদার, আদর্শ মানুষ হতে পারি ও সকলকে প্রভাবিত করতে পারি।

আমার বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্নের পেছনে একজন আছেন যিনি আমার আদর্শ। তিনি হলেন স্টিফেন হকিং। তিনি তার সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে একজন সফল বৈজ্ঞানিক হতে পেরেছিলেন। আমি শারীরিকভাবে বেশ দুর্বল। ওঁকে দেখে আমি আশ্বাস পাই যে, হার্দিক ইচ্ছা থাকলে আমিও এই শারীরিক বাধা অতিক্রম করতে পারব। স্টিফেন হকিং বিশ্বাস করতেন ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই, বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারাই এই পৃথিবীর সৃষ্টি ব্যাখ্যা করা যায়। মানুষ যখন কিছু জানতো না তখন তারা সংস্কার কে আশ্রয় করেছিল। কিন্তু আজ যখন সব জানা হয়ে গেছে তখন কেন বিজ্ঞানমনস্ক হবো না? তিনি বলেছেন মানুষ মারা যায়, আর তার অবশেষ বলে কিছু থাকেনা। তার সন্তানের মধ্যে ও তার করে যাওয়া কাজের মধ্যে সে বেঁচে থাকে।

স্টিফেন হকিং-এর আর একটা কথা আমাকে স্পন্দিত করেছে। তিনি তার একটা বইয়ে লিখেছেন,’আমরা জানি না কোন স্থান থেকে নতুন আবিস্কার আসবে,সেই আবিষ্কার কে করবেন? বিজ্ঞানের প্রসারতা, বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী ক্ষেত্রের  বিস্তারতা সেই নতুন আইনস্টাইনকে ঠিক চিনে নেবে।’ এই পরবর্তী আইনস্টাইনের কথা বলতে গিয়ে তিনি ‘she’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। এটাই আমার শ্রেষ্ঠ প্রেরণা।