সুখ গেছে জোনাকির

সুখ গেছে জোনাকির

নগরায়নের ধাক্কায় অস্তিত্বের সঙ্কটে জোনাকিরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উন্মুক্ত প্রকৃতি হারিয়ে যাচ্ছে নগরায়নের ঠেলায়। কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে সর্বত্র। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বায়ুর লাগামছাড়া দূষণ। আর এই ত্র্যহস্পর্শে প্রাণ ওষ্ঠাগত জোনাকিদের। জোনাকির দুই হাজার প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে। গবেষণা বলছে, সব প্রজাতিই বিলুপ্ত হওয়ার পথে। জোনাকির কাছে একটি বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃত্রিম আলো। বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োসায়েন্স প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্যই তুলে ধরেছেন গবেষকরা।
ওই গবেষক দলের প্রধান টাফটস ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক সারা লুইস জানিয়েছেন, নগরায়ণের প্রভাবে অনেক প্রাণী প্রজাতিই নিজেদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রজাতির জোনাকিও আছে, যাদের জীবনচক্র পুরো করার জন্য আশপাশের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ‍খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মালয়েশিয়াতে এক প্রজাতির জোনাকি আছে, যারা প্রজনন ঘটনায় ম্যানগ্রোভ গাছগাছালির এলাকায়। কিন্তু পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বাদাবনগুলো সব পাম তেলের কারখানা আর মাছের খামারে পরিণত হচ্ছে। ওই জোনাকি প্রজাতির টিকে থাকাই দায় হয়ে উঠেছে।
জোনাকির কাছে বিপদ হয়ে উঠেছে রাতের কৃত্রিম আলো। গত একশ বছরে নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। আর এত আলোর অত্যাচারে জোনাকির বংশ বিস্তার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
কেন সমস্যায় জোনাকিরা? জোনাকির পেটের নিচের অংশে যে আলো জ্বলতে নিভতে দেখা যায়, তার উৎস হল লুসিফারিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান। জোনাকির শরীরের এনজাইম লুসিফারেজের উপস্থিতিতে ওই লুসিফারিন অক্সিজেন, এটিপি আর ম্যাগনেশিয়াম আয়নের সঙ্গে মিশলেই জোনাকির দেহ থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে।
এই রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় বায়োলুমিনেন্স। কতটা আলো কতক্ষণ ধরে জ্বলবে,তা নির্ভর করে কী পরিমাণ অক্সিজেন জোনাকির শরীর সরবরাহ করবে তার ওপর।
এই আলোর সঙ্কেতই হল জোনাকির প্রেমের ভাষা। পুরুষেরা এই আলো জ্বেলেই সঙ্কেত দেয়। মেয়রাও তাতে সাড়া দেয় ছন্দবদ্ধ আলোর সঙ্কেতে। কিন্তু এই যোগাযোগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ঘরবাড়ি, সড়কবাতি, বিলবোর্ডের উজ্জ্বল আলো।
শহরের উজ্জ্বল আলো আকাশে যে দ্যুতি তৈরি করে তার প্রভাব অনেক দূর পর্যন্ত পড়ে। এই দ্যুতি পূর্ণিমার আলোর চেয়েও প্রখর হয়। জোনাকির আলোর সঙ্কেত তাতে হারিয়ে যায়।
অধ্যাপক সারা লুইসের গবেষণা বলছে, পৃথিবীর ২৩ শতাংশ জায়গা এই কৃত্রিম আলোয় আলোকিত থাকে। এই আলোকদূষণ জোনাক পোকার প্রজননের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।
গবেষণা বলছে, জাপান, তাইওয়ান, মালয়েশিয়ার মত দেশে রাতের বেলা জোনাক পোকার মিটিমিটি আলোর খেলা দেখার বিষয়টি পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি বছর দুই লাখ পর্যটক এই জোনাক পর্যটনে অংশ নিচ্ছেন। তাতে জোনাকির জীবন আর স্বাভাবিক থাকছে না। সেসব এলাকায় জোনাকির সংখ্যা দ্রুত হারে কমছে।