অ্যাওটিক ভাল্ভের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি

অ্যাওটিক ভাল্ভের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি

অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস মহাধমনী বা অ্যাওর্টার বিশেষ সমস্যাজনিত হৃদরোগ। ওই ধমনী দিয়েই বাম নিলয় (লেফ্ট ভেন্ট্রিক্যাল ) থেকে আসা অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যালসিফিক ডিজেনারেটিভ অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস মূলত ষাটোর্ধ্বদের অসুখ। যা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে অনায়াসে।
কী এই অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস? এই রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা কেনই বা বেশি?
মহাধমনী (অ্যাওর্টা) ও বামনিলয়ের মধ্যে অবস্থান করে অ্যাওর্টিক ভাল্ভ। হৃদপিন্ডের প্রতিটি স্পন্দনের সময় এই ভাল্ভ রক্তের চাপে খুলে যায় ও বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনী দিয়ে গোটা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। ভাল্ভটি একদিকে খোলে। অর্থাৎ মহাধমনীর দিকে রক্ত যায়। কিন্তু মহাধমনী থেকে রক্ত হৃদপিন্ডে ফিরতে দেয় না। ভাল্ভটি সাধারণ অবস্থাচ্যুত হয়ে সরু হয়ে গেলে তখনই আমরা বলি রোগীর অ্যাওটিক স্টেনোসিস হয়েছে। তখন ভাল্ভের অক্ষমতায় বাম নিলয় থেকে রক্ত মূল ধমনীতে যাওয়ার পথে বাধাপ্রপ্ত হয়। তাতেই বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা।
গত শতকের ষাটের দশক থেকে অ্যাওটিক স্টেনোসিসের ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারির আশ্রয় নেওয়া হত। কিন্তু বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ওপেন হার্ট সার্জারি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াত। ডাক্তাররা সব রোগীর ক্ষেত্রে তাই ওপেন হার্ট সার্জারি করতে চাইতেন না। ফলে রোগী বিনা চিকিৎসার এই রোগে মারা যেতেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে রউন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস নিকোল হাসপাতালের ফরাসি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যালান ক্রিবিয়ারের প্রচেষ্টা অ্যাওর্টিক ভাল্ভ পরিবর্তনে বিপ্লব এনে দিয়েছে। ওপেন বাইপাস সার্জারির বিকল্প পদ্ধতিটির পোশাকি নাম ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভাল্ভ ইমপ্লিমেন্টেশন বা ট্যাভি (Tavi)।
ঠিক কী এই টাভি?
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এখন অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে পরিচিত পদ্ধতি। একটি বেলুনের সঙ্গে স্টেন্টকে চুপসে আটকে ধমনীর মধ্যে একটি তারের সাহায্যে বেলুন মাউন্টেড স্টেন্ট প্রবেশ করানো হয়। তারপর বেলুনটি বাইরে থেকে ফুলিয়ে স্টেন্টটি হৃদযন্ত্রের সংকুচিত স্থানে বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সংকুচিত স্থানটি প্রসারিত হয়ে যায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু কেবল স্টেন্ট দিয়ে তো ভাল্ভের কাজ হবে না। তাই স্টেন্টের সাথে ভাল্ভ সেলাই করে দেওয়া হয়। তারপর বেলুনের ওপর স্টেন্ট যুক্ত ভাল্ভ জুড়ে দেওয়া হয়। যাকে বলে ক্রিম্পিং। তারপর তারের সাহায্যে বেলুন ভাল্ভকে অ্যাওর্টিক ভাল্ভের স্থানে নিয়ে গিয়ে বেলুনকে ফুলিয়ে স্টেন্ট সমেত ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করা হয় পুরাতন অকেজো ভাল্ভের জায়গায়। এবং পরে বেলুনটিকে চুপসে বাইরে বের করে আনা হয়। এই পদ্ধতির চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্মত নামই হলো টাভি(TAVI)।
২০০২ সালে হৃদপিন্ডের শল্য চিকিৎসক অ্যালেন ক্রিবিয়ার প্রথম টাভি পদ্ধতি ব্যবহার করে কোনও রোগীর অ্যাওর্টিক ভাল্ভ প্রতিস্থাপন করেন ওপেন হার্ট সার্জারির বিকল্প হিসেবে।
আগামী দিনে টাভির ব্যবহার অনেক বাড়বে, বলা যেতে পারে টাভিই অস্ত্রোপচারের ভবিষ্যৎ।