আশিতে আসিও না

আশিতে আসিও না

আমরা যারা ‘৮০তে আসিও না’ নামের বাংলা ছবিটি দেখেছি, নিশ্চিত মনে আছে বৃদ্ধের পুকুরের জলে ডুবে তরুণ হয়ে যাওয়ার সেই আশ্চর্য দৃশ্যটি। কিন্তু যদি সত্যিই অমন হয়? কোনো এক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় আবিষ্কৃত প্রক্রিয়াতেও কি হওয়া সম্ভব বৃদ্ধের তরুণ হওয়া?
এমনই চমকপ্রদ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করেছেন ‘ইন্সিটিউট অফ সিস্টেম বায়োলজি’র অন্ত্র-জীবানু গবেষক সিয়ান গিবসন। তিনি পরীক্ষা করেছেন ইঁদুরের ওপর। এবং বলেছেন, মানুষের ওপর পরীক্ষা করার জন্যে আরো দীর্ঘ গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু গিবসনের পরীক্ষাটি আসলে কেমন?
সকলেই জানেন, পাকস্থলি থেকে পায়ু পর্যন্ত প্যাঁচানো যে নালি তাকেই জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় অন্ত্র। এই অন্ত্রের অনুজীব, ব্যাকটেরিয়া গুলির প্রভাব স্বাস্থ্যের ওপর প্রচুর। গিবসনের পরীক্ষা মূলত এই অন্ত্রের অনুজীব, ব্যাকটেরিয়ার ট্রান্সপ্লান্টের ওপর নির্ভর করেই।
পরীক্ষার জন্যে গিবসন ৩-৪ মাস বয়সের (ইঁদুরের ক্ষেত্রে এটিই তরুণাবস্থা) ইঁদুরের মলের নমুনা নেন এবং মলের স্লারি আকারে (fecal slurry) ২০ মাস বয়সের (ইঁদুরের ক্ষেত্রে এটি বৃদ্ধাবস্থা) কিছু ইঁদুরের শরীরে ফিডিং টিউবের সাহায্যে তা প্রতিস্থাপন(ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করেন। প্রতি সপ্তাহে দুবার করে আট সপ্তাহ ধরে এই অন্ত্র- অনুজীব প্রতিস্থাপন চালান গিবসন।
গিবসনের টিম লক্ষ্য করেন, বৃদ্ধ ইঁদুরদের অন্ত্র- অনুজীব, ব্যাকটেরিয়া তরুণ ইঁদুরের অন্ত্রের অনুজীবে রুপান্তরিত হচ্ছে। যেমন, এন্টারোকোকাস হলো তরুণ ইঁদুরের অন্ত্রে থাকা অনুজীব। এই এন্টারোকোকাস এই ট্রান্সপ্লান্টের ফলে বৃদ্ধ ইঁদুরের অন্ত্রে বেড়ে যায় প্রচুর পরিমাণে। গবেষণা দল মস্তিস্কের বদলও লক্ষ্য করেন।
মস্তিকের একটি উপাদান হিপ্পোকম্পাস, যা বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তির সাথে জড়িত। দেখা যায়, ট্রান্সপ্লান্টের ফলে বৃদ্ধ ইঁদুরের মস্তিস্কের হিপ্পোকম্পাস তরুণ ইঁদুরের হিপ্পোকম্পাসের গাঠনিক ও রাসায়নিক গুন নিচ্ছে। এবং ইঁদুরের ক্ষেত্রে যা সমস্যাবলি, তা এই বৃদ্ধ ইঁদুরেরা দ্রুত পরিকল্পনামাফিক সমাধান করছে। দেখা যায়, যে বৃদ্ধ ইঁদুরের শরীরে বৃদ্ধ ইঁদুরেরই অন্ত্র-অনুজীব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের কিন্তু কোনো পরিবর্তন আসেনি।
তবে যে বৃদ্ধ ইঁদুরের শরীরে তরুণ ইঁদুরের অন্ত্র-অনুজীব প্রতিস্থাপিত হয়েছে, সেই বৃদ্ধ ইঁদুরগুলির ক্ষেত্রে অনেক অন্ত্র-অনুজীব অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। তারফলে যেমন , বৃদ্ধ ইঁদুরের তরুণ ইঁদুরের মতো দল বেঁধে খাবার খোঁজার অভ্যাস ফিরে আসেনি।
অবশ্য সম্পূর্ণ গবেষণা নিয়ে তর্ক তুলে দিয়েছেন ন্যাশানাল ‘ইন্সটিটিউট অফ অ্যাগিং’ এর জীববিজ্ঞানী অ্যারিয়া বিরাগ্যন। তাঁর কথা এই যে, গিবসন এবং দল গবেষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। ট্রান্সপ্লান্টের ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ কর্ক এর নিউরোসায়েন্টিস্ট জন ক্রায়ান তারপরেও এ গবেষণার ফলাফলে নতুন আশা দেখছেন।
কেমন হবে মানবদেহেও যদি এই প্রক্রিয়া কার্যকরী হয়?