ই-মেইলের জনক

ই-মেইলের জনক

পুরো নাম রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন। ই-মেইলের জনক বলা হয় তাকে। একজন প্রসিদ্ধ মার্কিন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে অধ্যাপনাও করেছেন। ১৯৭১-এ তার হাতেই সৃষ্টি ইলেকট্রনিক মেসেজ বা ই-মেইল বার্তা পাঠানোর পদ্ধতি। কিন্তু ই-মেইল পাঠানোর চেষ্টা তার আগে যে হয় নি তা নয়। একটু পিছিয়ে যেতে হবে তার জন্য।
সালটা ছিল ১৯৬৯। ইন্টারনেটের সঙ্গে তখনও মানুষের পরিচয় হয়নি। তবুও সেই সময় একটা ই-মেইল পরীক্ষামূলকভাবে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল এক কম্পিউটার থেকে দু’হাত দূরে থাকা আর একটি কম্পিউটারে। কিন্তু সেই ই-মেইলটি পৌঁছতে সময়ে লেগেছিল এল ঘন্টা! তাও ই-মেইলের পুরো অংশ পৌঁছয়নি! কারণ সিস্টেম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একটা লেখার দুটি বর্ণ মাত্র পৌঁছেছিল। এল এবং ও! তবে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু না হলেও সেই সময়েই বিভিন্ন জায়গায় থাকা কম্পিউটারে জমে থাকা তথ্য এক জায়গায় ধরে রাখার ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছিল। তার নাম ছিল আরপানেট। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত চারটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এই ব্যাবস্থায় কাজ হত। এর মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কম্পিউটার সংক্রান্ত গবেষণা সবথেকে বেশি হত। সেখানেই লিওনার্দো ক্লেইনরক আর চার্লি ক্লাইন নামের দুই বিজ্ঞানী কিন্তু চেষ্টা করেছিলেন ই-মেইল পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করতে। কিন্তু পারেননি। তবে ইতিহাস কিন্তু এই দু’জন বিজ্ঞানীকে ভোলেনি।
তার দু’বছরের মধ্যে, ১৯৭১-এ টমলিনসনের ই-মেইল পদ্ধতি আবিষ্কারের পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে সফল হল। আরপানেট ব্যবস্থার সঙ্গে টমলিনসন জুড়ে দিলেন আরও দু’টি প্রোগ্রাম। তাতেই সম্পূর্ণ হয় ই-মেইলের সাফল্য। প্রথমবারের চেষ্টাতেই সফল হয়েছিলেন টমলিনসন। ৭৪ বছর বয়সে মারা গেলেন এই মার্কিন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তার আগে, ১৯৬৭-তে টমলিনসন কিন্তু আরও এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন প্রযুক্তি শিল্পে। বিবিএন নামের এক প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত থাকাকালীন টমলিনসন আবিষ্কার করে ফেলেন টেনেক্স অপারেটিং সিস্টেম। তার মধ্যেই অন্তর্ভূক্ত ছিল আরপানেট নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল প্রোটোকল। আরপানেট ফাইল স্থানান্তরের প্রথম প্রোগ্রামটাও লিখেছিলেন টমলিনসন। ই-মেইল ঠিকানার সঙ্গে যে প্রতীক ব্যবহার করা হয় সেই @-ও টমলিনসনের আবিষ্কার। কিন্ত মজার বিষয়, ২০১৬-র ৫ মার্চ মারা যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে সংবাদমাধ্যম তাকে জিজ্ঞেস করেছিল প্রথম ই-মেইল তিনি কাকে পাঠিছিলেন আর কী লিখেছিলেন। টমলিনসন বলেছিলেন তার মনে নেই!