জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য আপদকালীন ব্যবস্থা নিতে হবে

জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার জন্য আপদকালীন ব্যবস্থা নিতে হবে

গ্রেটা থানবার্গ, কিশোর বয়সে ফ্রাইডেস ফর ফিউচার প্রতিবাদ শুরু করার পর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সক্রিয়তার একটা মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সম্প্রতি একটা বই লিখেছেন। এই বইতে তিনি বারেবারে যা তুলে ধরেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে মানুষের এই মুহূর্তে জরুরী অবস্থার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার , আর এই পরিবর্তন কীভাবে রোধ করা যায়, তা একত্রিত হয়ে চেষ্টা করা। কিন্তু তিনি বলেছেন, এবিষয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মিডিয়া, আমাদের চারপাশের সাধারণ মানুষ এমনকি ভেবে দেখতে গেলে আমরা নিজেরাও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছিনা, বলা ভালো এর গুরুত্ব উপলব্ধি করছি না।

জলবায়ু পরিবর্তন যে হচ্ছে তা মানুষকে বোঝানো এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়, এটা বেশ কিছুকাল ধরে ঘটে চলেছে, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। বরং ভবিষ্যত নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের সকলের কাছে এটা একটা বিপদঘণ্টা। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি আসক্তি -র ওপরে লেখা অধ্যায়, সজোরে আমাদের পেটে যেন একটা ঘুষি মারে, আমাদের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি।

বিশেষজ্ঞদের লেখা ছোটো ছোটো প্রবন্ধ নিয়ে একত্রিত ‘দ্য ক্লাইমেট বুক’ জলবায়ু সংকটের বিভিন্ন দিক, তার প্রাথমিক বিজ্ঞান, একে অবহেলা করা ও আবহমান কাল ধরে কোনো রকম ব্যবস্থা না নেওয়া থেকে শুরু করে, কী প্রতিকার করতে হবে তার যেন একটা বিশ্বকোষ।

বইয়ের প্রথম দুটো অংশ থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যে অল্প পরিমাণ উষ্ণায়ন কীভাবে বড়ো সুদূরপ্রসারী ফলাফল বিস্তার করতে পারে। কোনো কোনো পাঠকের কাছে এ বিষয়ে ধারণা থাকতে পারে, কিন্তু পরপর প্রতিটা রচনা যা একে অপরের পরিপূরক, তাতে যা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা হল পৃথিবীর জলবায়ু কতটা সূক্ষ্ম, সংবেদনশীল। ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। আমাদের প্রধান কাজ হল তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আমরা পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িয়ে ফেলেছি। বর্তমানে যে হারে আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে চলেছি, তাতে আমরা এই দশকের শেষেই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা ছাড়িয়ে যাব।

এই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাত্রা বাড়লে যা যা হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আঁচ দিয়েছেন, প্রাকৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিবর্তনীয় বদল আসবে, হিমবাহের বরফ গলে যাবে, ফলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে উপকূলভাগ ডুবিয়ে দেবে। পৃথিবীর অক্সিজেন ভাণ্ডার, আমাজনের অরণ্য ধ্বংস হয়ে শুকনো তৃণভূমিতে পরিণত হবে।

বইয়ে বারংবার বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে, ঐতিহাসিক নোট দিয়ে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন ও ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে বারবার বলার কারণ হল আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তন কী, এর ফলে কী হবে, এর মোকাবিলা করার জন্য কী করতে হবে। আমাদের জলবায়ুতে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে, আমাদের স্বাস্থ্য, জীবিকাসহ, অন্যান্য প্রাণীরাও বিপাকে পড়বে এর ফলে ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বইয়ের প্রতিটা প্রবন্ধ একই বার্তা দিয়ে শেষ হয়েছে, আমাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করতে হবে, এবং তা এখনি।