প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজন অভিভাবক অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ওষুধ দিয়ে থাকেন

প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজন অভিভাবক অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ওষুধ দিয়ে থাকেন

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুসারে বাচ্চাদের জ্বর হলে কিছু বাবা-মায়ের মধ্যে খুব দ্রুত ওষুধ দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। শীতের মরসুমে, যে সব শিশু নিয়মিত স্কুলে বা ডে কেয়ারে যায় তাদের মধ্যে অনেকেই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে। শিশু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার প্রথম ও স্পষ্ট ইঙ্গিত হল শিশুর উষ্ণ কপাল। সমীক্ষায় দেখা গেছে জ্বরের সময় অভিভাবকরা তাদের সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ বা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সিএস মট চিলড্রেন হসপিটালের ন্যাশনাল পোল অনুসারে, বেশিরভাগ অভিভাবক যদিও জানেন অল্প জ্বর একটি শিশুর শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, তবুও প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন অভিভাবক সন্তানের শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রির কম থাকলেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্বর কমানোর ওষুধ দেন যা কখনই কাম্য নয়।
বড়ো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অল্প অল্প জ্বর উপকারী হতে পারে তার কারণ হল এটি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে মারার অস্ত্র হিসাবে কাজ করে। জ্বর হল শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রতিলিপি সৃষ্টিতে বাধা দেয় এবং আরও শ্বেত রক্তকণিকা এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সহায়তা করে। তাপমাত্রা কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ ব্যথাও হ্রাস করে ফলত প্রায়শই সংক্রমণের উত্স শনাক্ত করা যায় না এবং রোগ নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় চিকিত্সা পেতে বিলম্ব হতে পারে। অনেক সময় শিশুরা ভালো বোধ করলে তাদের বাইরে নিয়ে গেলে তারা অন্যদের সংক্রামিত করতে পারে। ওষুধ ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের অতিরিক্ত ওষুধ না খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর কমানোর ওষুধ দিলে, সময় অনুযায়ী তাপমাত্রা নথিভুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে ছোটো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বর কমানোর ওষুধের সাথে সাথে ঠাণ্ডা লাগার ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মাথায় রাখতে হবে সমস্ত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তাই প্রয়োজনের বেশি ওষুধ না খাওয়ানোই শ্রেয়। জ্বরের সময় অস্বস্তি দূর করতে অভিভাবকরা ওষুধের পরিবর্তে অন্যান্য পন্থা বিবেচনা করতে পারেন যেমন বাচ্চাকে ঠান্ডা ঘরে রাখা বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে না দেওয়া, সেইসাথে শিশুকে হালকা পোশাক পরানো এবং বেশি পরিমাণে তরল পানীয় খাওয়ানো বা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। তিন মাস বা তার কম বয়সী শিশু এবং নবজাতকদের জন্য, জ্বরের যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসককের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। ৪ থেকে ১২ মাস বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জ্বরের সাথে যদি শিশুদের কার্যকলাপ কমে যায় বা অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় অথবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় তবে পিতামাতার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের যদি ২৪ ঘন্টার বেশি জ্বর থাকে এবং দুই বা তার বেশি বয়সী শিশুদের যদি তিন দিনের বেশি জ্বর থাকে বা শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি বা তার বেশি হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।