প্রবাল প্রাচীরের শব্দের সাথে চাঁদের আলোর যোগসূত্র

প্রবাল প্রাচীরের শব্দের সাথে চাঁদের আলোর যোগসূত্র

প্রতি প্রবাল প্রাচীরের নিজস্ব শব্দ আছে, মাছ বা অন্যান্য প্রাণীরা প্রবাল প্রাচীরে ঘোরার সময় তাদের কার্যকলাপে এই শব্দ সৃষ্টি হয়। জলের নীচে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর স্বতন্ত্র ক্লিক এবং পপিং শব্দ থাকে যেমন চিংড়ি বা মাছের খাওয়ার শব্দ। এই গুঞ্জন রেডিও স্ট্যাটিক এর শব্দের মতো প্রবাল প্রাচীরের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য যা গবেষকদের এই বিপন্ন সামুদ্রিক বাসস্থানগুলোর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল আন্ডারসি ওয়ারফেয়ার সেন্টার (NUWC) -এর ওশানোগ্রাফার ড্যানিয়েল ডুয়ান এবং সহকর্মীরা ২০২০-২১ সালে হাওয়াইয়ের পশ্চিম উপকূলের তিনটে প্রবাল প্রাচীরে তাদের সোনিক মনিটরিং সরঞ্জাম নিয়ে শব্দ পরিমাপ করতে গিয়েছিলেন। হাইড্রোফোনগুলি দশ বা পনেরো মিনিটের ব্যবধানে সাউন্ডস্কেপের এক মিনিটের স্ন্যাপশট নিয়েছিল। NUWC এবং অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি – এনার্জি (এআরপিএ-ই) এর গবেষকরা দেখেছেন যে চাঁদের উদয় ও অস্তের সাথে জলের নিচের শব্দ দ্রুত পরিবর্তিত হয়। মাছ থেকে উচ্চ কম্পাঙ্কযুক্ত শব্দ চাঁদের আলোর সময় বাড়তে দেখা যায়, আর মাছের কম কম্পাঙ্কের শব্দ, অমেরুদণ্ডী প্রাণীর শব্দ চাঁদের আলোর সময় হ্রাস পায়। অর্থাৎ গবেষকদের মতে চাঁদের উদয় ও অস্তের সাথে প্রবাল প্রাচীরের বাস্তুতন্ত্রের মিথষ্ক্রিয়ায় পরিবর্তন দেখা যায়। গবেষকরা জানিয়েছেন, জোরে আওয়াজযুক্ত প্রবাল প্রাচীর ব্যস্ত ও স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়, কারণ এতে বেশি জীব থাকে আর তারা তাদের খাবার এই স্থান থেকে আহরণ করতে পারে।
চন্দ্রোদয় এবং চন্দ্র অস্ত যাওয়ার সাথে জৈবিক শব্দের পরিবর্তন চাঁদের আলোর মাত্রা পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। এর সাথে জোয়ার ভাঁটার সরাসরি সম্পর্ক নেই, কারণ জোয়ার ভাঁটার সাথে চন্দ্রোদয় এবং চাঁদের অস্ত যাওয়ার সম্পর্ক নেই। চাঁদের আলোয় প্রবাল প্রাচীরের শব্দের পরিবর্তন নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছকে এর দিকে আকৃষ্ট করে এর বাস্তুতন্ত্র সমৃদ্ধ করে। বিভিন্ন প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে তুলনা করতেও এই শব্দ সাহায্য করে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন থেকে প্রবাল প্রাচীর রক্ষার জন্য পৃথিবী ব্যপী গবেষণা চলছে। তাছাড়া এই শব্দের সাথে প্রবাল প্রাচীরের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য মেলানো সম্ভব। এই গবেষণা PLOS one- এ প্রকাশিত হয়েছে।