ফল সবজি তাজা রাখতে মোমের ব্যবহার

ফল সবজি তাজা রাখতে মোমের ব্যবহার

কারেন্ট রিসার্চ ইন ফুড সায়েন্সের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক আকবুলুটের সাম্প্রতিক প্রকাশনা অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ফল এবং সবজির বাজারে ৫০%-এরও বেশি ফল, উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং ফসল কাটার পরের পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল বা সবজির আর্দ্রতা রক্ষা করা জরুরি যা ফল বা সবজিকে দীর্ঘদিন ধরে তাজা রাখে, ফল শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে। ফল এবং সবজিতে একটি প্রাকৃতিক মোমের আবরণ থাকে যা তাদের মধ্যে ৮০-৯৫% আর্দ্রতা ধরে রাখে। কিন্তু প্যাকেজিংয়ের সময়, এই ফল এবং শাকসবজিগুলো ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা হয় যার কারণে মোমের প্রাকৃতিক আবরণ উঠে যায় এবং ফল বা সবজির আদ্রতা রক্ষার জন্য কৃত্রিম মোম দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করতে হয়। আকবুলুটের গবেষণায় এই জাতীয় মোমকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রদানের জন্য দারচিনি গাছের ছাল থেকে নির্গত এসেনশিয়াল অয়েলের ব্যবহার করা হয়েছে যা বিজ্ঞানের ভাষায় ন্যানো-এনক্যাপসুলেটেড করা হয়েছে।
বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে তবে, খাদ্য শিল্প এই অগ্রগতির সাথে অগ্রসর হতে পারেনি ফলত খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমাগত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। খাদ্যজনিত রোগ এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে শত শত মানুষের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর প্রায়ই জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত হয়। আকবুলুটের এই মোমের আবরণ ফল ও সবজি তাজা রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সুরক্ষা প্রদান করে। ফল বা যে সব সবজি কাঁচা খাওয়া হয় সেই ক্ষেত্রে জীবাণু সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ন্যানো-এনক্যাপসুলেটেড এসেনশিয়াল অয়েল, ফল বা সবজিতে ব্যাকটেরিয়ার আটকে থাকা বা বেঁচে থাকা কঠিন করে তোলে। এই মোমের আবরণের তাৎক্ষণিক ও পরবর্তী ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। যখন ব্যাকটেরিয়া এই এসেনশিয়াল অয়েলের সংস্পর্শে আসে তখন তার কোশ প্রাচীর ভেঙে যায় এবং এই প্রযুক্তিটি মূলত ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাককে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে ও ফল সবজি সংরক্ষণে করে। এই আবরণটি ছত্রাকের সংযুক্তিও রোধ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে অ্যাসপারজিলাস নামে এক ছত্রাক যা খাবার নষ্ট করে এবং মানুষের ফুসফুসের সংক্রমণের জন্য দায়ী, তার বৃদ্ধি এই আবরণের মাধ্যমে রোধ করা যায়। এই হাইব্রিড মোম তৈরি করতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সেগুলো এফডিএ-অনুমোদিত। গবেষকদের মতে এই হাইব্রিড মোমের আবরণ সহজেই মাপা যায় এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে প্রয়োগ করা যেতে পারে।