বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের বয়স পুনঃস্থাপিত হয়

বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের বয়স পুনঃস্থাপিত হয়

আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের কোশগুলো পুরোনো হয়, তাদের বার্দ্ধক্য আসে। MIT -র ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজিস্ট, ইয়োকিকো ইয়ামাশিতা ডিম্বাণু ও শুক্রানুর চিরন্তনশীলতা নিয়ে গবেষণার সূত্রে বলেছেন, আমাদের সন্তান কিন্তু, তার বাবা- মা-র বয়স নিয়ে জন্মায় না, তার বয়স শূন্য থেকেই শুরু হয় এটা একটা অদ্ভুত রহস্য।
বিশেষজ্ঞরা আগে ভাবতেন, ডিম্বাণু ও শুক্রানু কোশগুলোর বয়স হয়তো বাড়ে না। কিন্তু গবেষণা সূত্রে দেখা গেছে, ডিম্বাণু ও শুক্রানুর মধ্যেও বয়স বৃদ্ধির ছাপ পড়ে। সেখান থেকে তারা ভেবেছেন, ডিম্বাণু ও শুক্রানু কোশ মিলিত হওয়ার পর ভ্রূণে পরিণত হওয়ার সময় হয়তো নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে আবার নতুন করে জীবন শুরু করে। ইদুঁরের এবং মানুষের ভ্রূণ নিয়ে গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এটা প্রমাণও করেছেন। সায়েন্স অ্যাডভান্স – এ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ভ্রূণ জরায়ুর সাথে যুক্ত হওয়ার পর, ভ্রূণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে এই পুনর্যৌবনের কাজ শুরু হয়ে যায়।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের, ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজিস্ট ভিট্টোরিও সেবাস্টিনো বলেছেন, ডিম্বাণু ও শুক্রানু কীভাবে তাদের বার্দ্ধক্যকে পুনর্যৌবনে পরিণত করতে পারে, তা কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা আর্থাইটিস পার্কিনসন্সের মতো বার্দ্ধক্যজনিত অসুখের চিকিৎসা করতে পারেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, আর্থাইটিস, পার্কিনসন্সে বয়সজনিত ক্ষতির কারণে কিছু কোশ ঠিকমতো কাজ করে না, এই কোশগুলোর বয়সের বৃদ্ধি রুখে যদি পুনরুজ্জীবিত করা যায় হয়তো এই অসুখের মোকাবিলা করা সম্ভব। আবার এই পদ্ধতি স্বাভাবিক কোশে প্রয়োগ করলে তাদের বার্দ্ধক্য রুখে সজীবতা ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের, বায়োকেমিস্ট ও জেনেটিসিস্ট ভ্লাদিম গ্ল্যাদিশেভ ও তার সহকারীরা, মলিকুলার ক্লকের সাহায্যে বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে ইঁদুরের ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ করেছেন। মলিকুলার ক্লক এপিজেনেটিক পরিবর্তন, বয়সের ফলে বা দূষণের জন্য কোশের DNA – তে রাসায়নিক যোগ করে কী পরিবর্তন হয়েছে তা মাপে। এই রাসায়নিক যুক্ত করার ফলে জিনের ক্রিয়ার পরিবর্তন হয়, কিন্তু জিনের উপাদানের কোনো পরিবর্তন হয় না।
বিজ্ঞানীরা ভ্রূণের বায়োলজিকাল বয়স নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তার ক্রোনোলজিকাল বয়স দেখেন নি, অর্থাৎ সংখ্যার দিক থেকে বয়স না মেপে কাজ ও স্বাস্থ্য অনুযায়ী ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ করেছেন। এই এপিজেনেটিক পরিবর্তন দেখতে গিয়ে, তারা দেখেছেন, নিষিক্ত হওয়ার পর কোশ বিভাজনের প্রাথমিক পর্যায়ে ইঁদুরের ভ্রূণের বয়স শুক্রাণু ও ডিম্বানুর মতোই থাকে। কিন্তু ৬.৫ থেকে ৭.৫ দিন পরে, ভ্রূণ যখন জরায়ুতে সংযুক্ত হয়, কোশগুলো পুনরুজ্জীবনের মধ্যে দিয়ে যায়, আর বায়োলজিকাল বয়স কমতে থাকে। তারা দেখেছেন, ৪.৫ থেকে ১০.৫ দিনের মধ্যে ইঁদুরের ভ্রূণের বয়স ‘০’ হয়ে যায়। বিকাশের একটা পর্যায়ে যাওয়ার পর ইঁদুরের ভ্রূণের বয়স বাড়তে থাকে, তবে সেই সময়টা এখনও তারা নির্ধারিত করতে পারেননি।
মানুষের ভ্রূণের বয়স শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়, কারণ ভ্রূণের বিকাশের একদম শুরুর দিকে মানুষের ভ্রূণ পর্যবেক্ষণ নিষিদ্ধ। কিছু মানব ভ্রূণ যেগুলি ইঁদুরের ভ্রূণের তুলনায় বিকাশে কিছুটা এগিয়ে আছে তাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তাদের বয়স সঙ্গে সঙ্গেই বাড়েনি, এটা ইঙ্গিত দেয়, মানুষের ভ্রূণেও একই প্রক্রিয়া ঘটে।
সেবাস্টিনো, ইয়ামাশিতা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে কোশ তার বয়সকে পুনঃস্থাপন করছে? কোনো নির্দিষ্ট জিন কী এর জন্য দায়ী? সেই নির্দিষ্ট জিন কী সংখ্যায় একাধিক থাকে, যার জন্য মলিকুলার ক্লকের পক্ষে শুক্রাণু ও ডিম্বানুর ক্ষেত্রে ঠিক কোন সময়ে বয়স ‘০’ তে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তা মাপা সম্ভব হচ্ছে না? ভবিষ্যতে গবেষণায় কোশের বয়স নিয়ে আরো সঠিক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।