বেড়েই চলেছে স্থূলতা

বেড়েই চলেছে স্থূলতা

বর্তমানে সদ্য কাটিয়ে ওঠা কোভিড মহামারী শেষে ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে আর এক সম্ভাব্য মহামারী। আর তা হল স্থূলতা বা ওবেসিটি। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী স্থূলতার হার বাড়ছে। একটি নতুন বিশ্লেষণে স্থূলতা বৃদ্ধির হার উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষের স্থূলত্ব দেখা গিয়েছিল যা ২০২২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মধ্যে দেখা গেছে। এমন কথাই বলছে সম্প্রতি ল্যানসেটের এক রিপোর্ট।
কানাডার এডমন্টনের আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ আর্য শর্মার মতে শরীরের অতিরিক্ত চর্বির উপস্থিতি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে আর একেই বলে স্থূলতা। স্থূলতার কারণে হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, কোভিড ১৯-এর মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে এবং চলাফেরা সীমিত হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। স্বাস্থ্য গবেষক মজিদ ইজ্জাতি এবং সহকর্মীরা প্রায় ২০০টি দেশ এবং অঞ্চল জুড়ে ২২২ মিলিয়ন অংশগ্রহণকারীকে অন্তর্ভুক্ত করে গত কয়েক দশকে প্রকাশিত ৩৬০০টিরও বেশি জনসংখ্যা-ভিত্তিক গবেষণা পরীক্ষা করেছেন। গবেষকরা তাদের বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই গণনা করেছেন। বিএমআই হল একটি সাধারণ হিসাবের মাপকাঠি। কোনও ব্যক্তির ওজন আর উচ্চতা থেকে হিসাব করা হয় তার বিএমআই। এই হিসেবের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেছে ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্কদের বিএমআই ৩০ বা তার বেশি ছিল, ফলত তাদের স্থূল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে, প্রায় ১৬০ মিলিয়নের দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছিল। ১৯৯০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, মহিলাদের মধ্যে স্থূলতার প্রকোপ প্রায় দ্বিগুণ, পুরুষদের মধ্যে তিনগুণ এবং শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে চারগুণ বেড়েছে। একই সময়ে, যাদের ওজন কম তাদের বিশ্বব্যাপী হার কমেছে। গবেষকদের মতে কম ওজন এবং স্থূলতাকে দুটি পৃথক বিষয় হিসাবে চিন্তা করা উচিত নয়, কারণ একটি থেকে অন্যটিতে স্থানান্তর খুব দ্রুত হয়। তাই স্থূলতা বিষয়ক সতর্কতা বাড়াতে হবে ও তার মোকাবিলা করতে হবে। মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড়ো কারণের মধ্যে একটি হল স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া বা তা খাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকা। তাছাড়াও সামাজিক-স্তরে জীবনধারার পরিবর্তন যেমন কম ঘুম, দৈনন্দিন জীবনে চাপের মাত্রা বৃদ্ধি বা বাড়িতে কম সময় কাটানোর ফলে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। খিদে পাওয়ার পিছনে এক জটিল জীববিজ্ঞান রয়েছে এবং সেই জীববিজ্ঞান পরিবেশগত পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়।