বোহেড তিমির কি সত্যি ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে?

বোহেড তিমির কি সত্যি ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে?

আলাস্কার উত্তর প্রান্তের কাছে, আর্কটিক মহাসাগরের উপকণ্ঠে, বোহেড তিমি, বালেনা মিস্টিসেটাস (Balaena mysticetus-এর বাসস্থান। প্রাণীজগতে বোহেডের মুখ এবং মাথা সবচেয়ে বড়ো এবং এই মাথা তাদের শরীরের দৈর্ঘ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ।এদের মুখের উপরের চোয়ালের পৃষ্ঠ দি্ক বো (bow) বা ধনুকের আকৃতির মতো যা অন্যান্য তিমিদের মতো নয় তাই এদের নাম বোহেড তিমি । বোহেড তিমি, লম্বায় প্রায় ১৮ মিটার এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। এদের ওজন প্রায় ৮০,০০০ কিলোগ্রামেরও বেশি, যা ছটা ভর্তি স্কুল বাসের সমতুল্য। তাদের শরীর বিশাল সংখ্যক কোশ দ্বারা গঠিত এবং যখনই একটি কোশ বিভাজিত হয়, প্রতিনিয়ত সম্ভাবনা থাকে একটি বিপজ্জনক মিউটেশন বা পরিব্যক্তি ঘটে যাওয়ার।
বিজ্ঞানীরা এই তিমির দীর্ঘায়ুর একটি আভাস পেয়েছেন। এই বিশাল সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় বাঁচতে পারে – এবং এই প্রাণীদের থেকে সংগৃহীত কলার নমুনা থেকে এদের এক অদ্ভুত ক্ষমতার কথা প্রকাশ পেয়েছে যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা ৪ মে-র রিপোর্টে করেছেন। বোহেড তিমির কোশ ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামত করার জন্য পারদর্শী। প্যারিসের ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের এক বিবর্তনীয় বাস্তুবিজ্ঞানী ওরসোল্যা ভিনজে বলেছেন, এই ক্ষমতার মাধ্যমে তিমি ক্ষতি মেরামত করতে পারে যা অন্যথায় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী জিনগত ত্রুটির কারণ হতে পারে। এর আগে বিজ্ঞানীরা ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য অন্যান্য প্রাণীর জৈবিক কৌশল সম্পর্কে গবেষণা করেছেন। ভিনজে আরও বলেছেন যে তিমিরা নতুন পন্থায় ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। যে কোনোভাবেই হোক, এই বৃহৎ দেহবিশিষ্ট প্রাণীরা ক্যান্সার প্রতিরোধী আর এটা একটা ধাঁধার মতোই যা ‘পেটোস প্যারাডক্স’ নামে পরিচিত। সল্ট লেক সিটির ইউটাহ হেলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেল বায়োলজিস্ট লিসা অ্যাবেগলেনের মতে এই প্রাণীদের প্রচণ্ড শক্তিশালী ক্যান্সার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে পারে।
DNA ডাবল-স্ট্র্যান্ড ব্রেকস (DSBs) হল DNA ক্ষতের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকারের একটি। এর ফলে ডিএনএ ডাবল হেলিক্সের দুটো স্ট্র্যান্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যার ফলে কোশটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। নিউইয়র্কের রচেস্টার ইউনিভার্সিটির ভেরা গরবুনোভা এবং তার সহকর্মীরা বোহেড তিমির কলা থেকে সংগ্রহ করা কোশের পাশাপাশি মানুষ, গোরু এবং ইঁদুরের কোশের উপরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তারা দেখেন যে তিমির কোশ দক্ষতার সঙ্গে এবং নির্ভুল্ভাবে ডিএনএ-তে ডাবল-স্ট্র্যান্ড ব্রেক মেরামত করতে সক্ষম। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোশের তুলনায় তিমি ভেঙে যাওয়া ডিএনএকে একদম নতুন অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে যা অন্যান্য প্রাণীরা পারে না। গবেষকের দল বোহেড তিমির কোশে দুটি প্রোটিন শনাক্ত করেছে, সিআইআরবিপি এবং আরপিএ ২ (CIRBP and RPA2), যা ডিএনএ মেরামতের কারিগর।
অ্যাবেগলেনের কথা অনুযায়ী প্রাণীরা কীভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে তা আবিষ্কার করা খুবই রোমাঞ্চকর। কারণ এই সমস্ত কৌশলগুলো ভবিষ্যতে ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কার্যকর চিকিত্সা পদ্ধতিতে ব্যবহার করার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেই দিনটি এখনও অনেক দূরে তবুও অ্যাবেগলেন পরীক্ষা করতে চান যে উক্ত ফলাফল হাম্পব্যাক তিমি এবং ডলফিন কোশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কিনা – বা সেই প্রাণীদের আলাদা কোনো প্রতিরক্ষা আছে কিনা। ভিনজের মতে এইসব বৃহৎ দেহ এবং দীর্ঘ আয়ু বিশিষ্ট প্রাণীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সম্ভবত প্রকৃতিতে ইতিমধ্যেই ক্যান্সারের ওষুধের সমাধান রয়েছে, আমাদের শুধু সেটা খুঁজে পেতে হবে।