শব্দ দূষণকারী গাড়ি ও মানসিক স্বাস্থ্য

শব্দ দূষণকারী গাড়ি ও মানসিক স্বাস্থ্য

আমরা প্রায়শই প্রচন্ড শব্দ তুলে চারদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে দিয়ে বাইক ছুটিয়ে চলা যাওয়া মানুষের দেখা পাই। আমাদের আশেপাশে মাঝামাঝে এই পরিবেশ বিঘ্নকারী শব্দ মুহূর্তের মধ্যে আমাদের প্রশান্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। জানবেন এই ধরনের গাড়ির মালিকের মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে স্যাডিজম এবং সাইকোপ্যাথির যোগ থাকতে পারে। কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জুলি আইটকেন শেরমার ‘অন্ধকার’ ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য এবং গাড়ির সাইলেন্সার বিহীন বা উচ্চ শব্দের গাড়ির পছন্দের মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করতে ৫২৯ জন ছাত্রদের বিশ্লেষণ করেছেন, যাদের গড় বয়স ছিল ১৮ বছর আর তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ। ‘কার স্কেল’ জোরে আওয়াজসম্পন্ন গাড়ির প্রতি অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতি, তাদের নিজস্ব গাড়ির সাথে এর সাদৃশ্য, এবং গাড়ির মাফলার পরিবর্তন করার সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। মাফলার গাড়ির নির্গমন এবং ইঞ্জিনের শব্দ কমাতে সহায়তা করে। এগুলো ইঞ্জিনের পিস্টন এবং ভালভ দ্বারা সৃষ্ট উচ্চ শব্দকে অপসারণ করে।
জোরে আওয়াজসম্পন্ন গাড়ি পছন্দের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের উচ্চ স্কোর পাওয়া গেছে। অংশগ্রহণকারীরা ‘শর্ট ডার্ক টেট্রাড’ টেস্ট সম্পন্ন করেছিল। এটা ২৮ টা আইটেম স্কেল যা ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম, নার্সিসিজম, সাইকোপ্যাথি এবং স্যাডিজমের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলিকে তাদের মন্দ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘অন্ধকার’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম হল এমন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য যা আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্কে হেরফের ঘটানো, নৈতিকতার প্রতি উদাসীনতা, সহানুভূতির অভাব এবং স্ব-স্বার্থের উপর কৌশলে ফোকাস করে। নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে মানুষের নিজস্ব গুরুত্ব সম্পর্কে অযৌক্তিকভাবে উচ্চ ধারণা থাকে। সাইকোপ্যাথি এমন নিউরোসাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার যাতে আবেগজনিত প্রতিক্রিয়ার ঘাটতি, সহানুভূতির অভাব এবং আচরণগত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়। স্যাডিস্টরা মানুষ বা পশুকে মেরে, ব্যথা দিয়ে আনন্দ পায়।
শেরমার বলেছেন যারা গাড়ির মাফলার পরিবর্তন করে গাড়ির শব্দ জোরে করতে চায় তাদের মধ্যে স্যাডিসম ও সাইকোপ্যাথির ধরন দেখা যায়। এরা নিজেদের গাড়ির সাথে বেশি সংযুক্ত বোধ করে আর এও মনে করে উচ্চ শব্দের গাড়িগুলোই দুর্দান্ত। অন্যান্য মানুষের অনুভূতি প্রতিক্রিয়ার প্রতি তাদের কোনো হেলদোল নেই। তারা লোকেদের চমকে উঠতে দেখে বেশ আনন্দ উপভোগ করে। তবে ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম, নার্সিসিজম যাদের আছে তাদের সাথে এর স্কোরের উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। গবেষণাটি পার্সোনালিটি সাইকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে।