প্রায় ৬৩৫ থেকে ৫৪১ মিলিয়ন বছর আগে এডিয়াকারান সময়কাল, পৃথিবীর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় রূপান্তরমূলক যুগ হিসেবে চিহ্নিত কারণ এই সময়ে জটিল, বহুকোশী জীবের আবির্ভাব ঘটে। কিন্তু জীবনের এই ঢেউ কীভাবে এসেছিল? এর পেছনে কী কারণ ছিল? ডিপার্টমেন্ট অফ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপকের মতে, এডিয়াকারান সময়কালে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল এডিয়াকারান প্রাণীজগৎ। এই সময়ে কিছু প্রাণী এক মিটারেরও বেশি আকারসম্পন্ন ছিল, যারা নড়া চড়া করতে পারত। যা ইঙ্গিত দেয়, পূর্বের জীবজগতের তুলনায় এদের বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হত।
পৃথিবীর ভূমির ২৮৯৭ কিলোমিটার নীচে, পৃথিবীর বাইরের কেন্দ্রে তরল লোহা আন্দোলিত হচ্ছে, ঘুরছে, যা গ্রহের প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করছে। এই অদৃশ্য, চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীতে জীবনের জন্য অপরিহার্য কারণ এটা আমাদের গ্রহকে সূর্যের বিকিরণ বা সৌর বায়ু থেকে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র সবসময় এত শক্তিশালী ছিল না। ফেল্ডস্পার ও অ্যানওর্থোসাইট শিলা নানাভাবে অধ্যয়ন করে গবেষকরা দেখেছেন এডিয়াকারান যুগে চৌম্বক ক্ষেত্র সবচেয়ে দুর্বল ছিল। যা বর্তমানের তুলনায় ৩০ গুণ দুর্বল ছিল। আর এই দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রে ২৬ মিলিয়ন বছর ব্যাপী বিরাজ করেছিল। দুর্বল দৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে হালকা ওজনের হাইড্রোজেন পরমাণু সূর্যের আয়নিত কণার আঘাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বেরিয়ে মহাকাশে মিশে যাচ্ছিল। ফলে বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের সাথে মিলে জলে পরিণত হওয়ার বদলে অক্সিজেনের আধিক্য বেড়ে যাচ্ছিল। অন্তত ১০ মিলিয়ন বছর যাবত হাইড্রোজেন মহাকাশে নির্গত হয়েছে যাতে অক্সিডেশন বৃদ্ধি পেয়েছে আর সমুদ্রে নতুন জীবনের রূপ বিকশিত হয়েছে। এর পরবর্তী সময়ে ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ডে ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের শক্তি পুনরুদ্ধার হয়, আর জীবাশ্মের রেকর্ড থেকে দেখা গেছে বেশিরভাগ প্রাণী গোষ্ঠীর বিকাশ শুরু হয়েছে। প্রতিরক্ষামূলক চৌম্বক ক্ষেত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়ে পৃথিবীর জীবনকে উন্নত করেছে। নেচার কমিউনিকেশন আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি এই চৌম্বক ক্ষেত্র দুর্বল থেকে যেত তবে পৃথিবীতে আজকের রূপ দেখা যেত না, জলের অভাবে সবুজ পৃথিবী এক শুকনো গ্রহে পরিণত হত।