মরুকরণ রুখতে অণুজীব

মরুকরণ রুখতে অণুজীব

শুষ্ক, খুব কম আর্দ্রতাসম্পন্ন স্থানে যেমন মরুভূমি বিস্তারের সম্ভাবনা থাকে তেমন তৃণভূমি, ঝোপঝাড়ে ভরা অঞ্চলও ক্রমশ গাছপালা হারাতে হারাতে অনুর্বর জমিতে পরিণত হচ্ছে। এতে যেমন বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হচ্ছে তেমন এই এলাকার স্থানীয় মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। তাই মরুভূমির বিস্তার রোধের জন্য কার্যকরী কৌশল নেওয়া দরকার। মরুভূমির প্রসারের জন্য প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টি ও হাওয়ার বেগের পরিবর্তন, সূর্যের বিকিরণের তীব্রতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন চরম আবহাওয়া (এল নিনো/ লা নিনা) মরুকরণের দিকে ভূমিকে নিয়ে যায়। মানুষ যেভাবে মরুকরণ ত্বরান্বিত করে থাকে তা হল জ্বালানী কাঠের জন্য বনের গাছপালা কাটা, কৃষি ও নগরায়নের জন্য জমি পরিষ্কার করা, নিবিড়ভাবে একক ফসল চাষ, রাসায়নিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার,তার সাথে অদক্ষ সেচ ব্যবস্থা, যাতে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। আবার গবাদি পশু অতিমাত্রায় চরালে মাটির সংকোচন ঘটে যা থেকে ক্ষয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। খনির জন্য খনন কাজ, আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জলের জোগান দিতে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার জলের জোগান কমিয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
মরুকরণ বৃদ্ধির সাথে সাথে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, নানা প্রজাতির বিলুপ্তি, মাটির উর্বরতা নষ্ট, খাদ্য নিরাপত্তায় ঘাটতি, জল সরবরাহ বিপন্ন হওয়া, ধূলিঝড় বৃদ্ধি পেয়ে বায়ুর গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাতে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে। তার সাথে মানুষের অভিবাসন ঘটে যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় পরিণতি দেখা যায়।
আর্থ সায়েন্স রিভিউ নামক জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, মাটির কণার ফাঁকে বসবাসকারী ক্ষুদ্র অণুজীব মরুকরণ রোধে কার্যকর সমাধান হতে পারে। অণুজীব জৈব পদার্থ পচিয়ে পরিবেশে পুষ্টিচক্র বজায় রাখে, ফলে মাটির উর্বরতা বাড়ে। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড ধরে তা হিউমাসে সঞ্চয় করে রাখে এতে মাটির উর্বরতা ও জল ধারণক্ষমতা বাড়ে। উদ্ভিদের শিকড়ে অবস্থিত নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়া যেমন রাইজোবিয়াম, ব্রাডিরাইজোবিয়াম বায়ুতে অবস্থিত নাইট্রোজেন ধরে তা অ্যামোনিয়াতে পরিণত করে, যা উদ্ভিদ গ্রহণ করতে পারে। মটরশুঁটি, বিন, ডালজাতীয় গাছের সাথে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মিথোজীবী সম্পর্ক বজায় রাখে। তাই শুষ্ক অঞ্চলে এই গাছ রোপণ করা যেতে পারে। এছাড়াও মিথোজীবী ছত্রাক তাদের হাইফিগুলো মাটির নীচে বিস্তার করে যা গাছের শিকড়ে পুষ্টি ও জলে জোগানে সুবিধা দেয়। এই মাইকোরাইজাল ছত্রাক উদ্ভিদ থেকে জৈব কার্বন যৌগ মাটিতে পরিবহন করে, যেখানে তাদের গ্লোমালিন নামে গ্লাইকোপ্রোটিন হিসেবে ধরে রাখা যায়, সেইসাথে হিউমাস গঠিত হয়। গ্লোমালিনের মাটির কণাকে আবদ্ধ করে, যা ক্ষয়রোধে সাহায্য করে।
গবেষকরা দেখছেন পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য অঞ্চলে মাটির জীবাণুর কৌশলগত প্রয়োগ মরুকরণ দূরীকরণে পরিমাপযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ভারতের আরাবল্লী পর্বতের খনি এলাকায় তাদের যথাযথ ব্যবহার গাছপালা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। মাইকোরাইজাল ছত্রাক, রাইজোবিয়াম, অ্যাকটিনোব্যাকটেরিয়া চিনের লোয়েজ মালভূমির মরুভূমি রোধে কাজে লেগেছে। আমেরিকার দক্ষিণপশ্চিমে মরুকরণ রোধেও এই অণুজীব কাজে লাগানো হয়েছে।