‘মেরু ঘূর্ণি’ বায়ু সঞ্চালন বিপরীত দিকে প্রবাহিত হচ্ছে

‘মেরু ঘূর্ণি’ বায়ু সঞ্চালন বিপরীত দিকে প্রবাহিত হচ্ছে

মেরু ঘূর্ণি হল পৃথিবীর উভয় মেরুকে ঘিরে থাকা নিম্নচাপ এবং ঠান্ডা বাতাসের একটা বিশাল এলাকা। এই বাতাস সর্বদা মেরুর কাছাকাছি থাকে, যা গ্রীষ্মে দুর্বল থাকে আর শীতকালে শক্তিশালী হয়। “ঘূর্ণি” শব্দটি বায়ুর ঘড়ির কাঁটা ঘোরার বিপরীত দিকে প্রবাহকে বোঝায় যা মেরুদ্বয়ের কাছাকাছি ঠান্ডা বাতাসকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকালে, মেরু ঘূর্ণি প্রসারিত হয়ে, জেট স্রোতের সাথে ঠান্ডা বাতাস দক্ষিণ দিকে পাঠায়। উত্তর মেরুতে ২৫০কিমি/ঘণ্টায় বয়ে যাওয়া এই মেরু ঘূর্ণি ঠাণ্ডা বাতাসের একটা পকেট তৈরি করে। মেরু ঘূর্ণি বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ঘটে, গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬-২০ কিলোমিটার ওপরে এই ঘূর্ণি শুরু হয় যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ওপরে পৌঁছায়। আমরা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নীচের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের আবহাওয়া অনুভব করে থাকি।
মার্চ মাস থেকে আর্কটিক মেরু ঘূর্ণি বা উত্তর মেরুতে সঞ্চালিত বায়ুর প্রধান স্রোতের গতিপথ সম্পূর্ণরূপে বিপরীত গতিতে পরিণত হয়েছে আর এখন এই বাতাস ‘পিছন দিকে’ ঘুরছে। বাতাস এখন পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে, বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করছেন এর ফলে আগামী মাসগুলোতে আবহাওয়া ব্যবস্থার উপর কী প্রভাব পড়তে পারে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) -এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এটা ১৯৭৯ সালের পর থেকে ছয়টি শক্তিশালী শীর্ষ বিপরীত অবস্থার মধ্যে পড়ে।
যদি রসবি তরঙ্গ নামে বায়ুমণ্ডলীয় তরঙ্গ মেরু ঘূর্ণিকে ধাক্কা দিয়ে দুর্বল করে দেয়, তাহলে কিছু ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে যা আকস্মিক স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক ওয়ার্মিং ইভেন্ট হিসাবে পরিচিত, যার ফলে মাঝে মাঝে মাটিতে ঠান্ডা ঝটকা আসতে পারে। তবে মেরু ঘূর্ণি পরিবর্তনের পরিণতি বিশ্লেষণের এটা একদম প্রাথমিক দিক। কিন্তু বিজ্ঞানীরা উত্তর মেরুর ওপরে ওজোন স্তরে একটি বৃদ্ধি দেখেছেন। দুর্বল মেরু ঘূর্ণি মেরুতে আরও ওজোন প্রবাহিত করে আর ওজোন সেখানে অবস্থান করে, এ বছর মার্চ মাসে উত্তর মেরুতে রেকর্ড ওজোন বৃদ্ধি হয়েছে। মেরু ঘূর্ণি স্বাভাবিকভাবে ঘড়ির কাঁটা ঘোরার বিপরীতে ঘূর্ণায়মান হলে ওজোন স্তর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা উচিত, আর এখনও পর্যন্ত এতে আবহাওয়ার বিশেষ কোনো ফারাক পড়েনি। অতীতেও দেখা গেছে মেরু ঘূর্ণির দিক পরিবর্তন আবহাওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী এক ফল রয়েছে, পৃথিবী আরও উত্তপ্ত হওয়ার সাথে সাথে মেরু ঘূর্ণি কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তা স্পষ্ট নয়। এল নিনোর সঞ্চালনের ধরণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের বরফ আস্তরণ পর্যন্ত সবকিছুই ভূমিকা পালন করবে, এবং বিশেষজ্ঞরা আগামী বছরগুলিতে মেরু ঘূর্ণি আর যে কোনও বড়ো পরিবর্তনের উপর নিবিড় নজর রাখবেন৷