পাইয়ের মান কোথায় পাই

পাইয়ের মান কোথায় পাই

প্রাচীন ব্যাবিলন। সেখানকার মানুষ জ্যামিতিগত গণিতে যে দক্ষ ছিলেন তার প্রমাণ আমরা পাই বারেবারেই। গণিত-পরিবারের এক আশ্চর্য সদস্য ‘পাই’-কেও প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় ওই সময়কার নথিপত্রেই। বৃত্তের পরিধিকে তার ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে সবসময়েই পাব এই সংখ্যাকে। প্রাচীন ব্যাবিলনের মানুষেরা নির্ণয় করতে পেরেছিলেন আরও একটা সম্পর্ক। বৃত্তের ব্যাসার্ধকে বর্গ করে তার সঙ্গে তিন গুণ করে তাঁরা বের করেছিলেন বৃত্তের ক্ষেত্রফল। এই হিসেবে পাইয়ের প্রথম যে মান আমরা ওই আমলের পাথরটুকরো থেকে দেখতে পাই, সেটা গোটা ৩। এই পাথরের বয়স প্রায় চার হাজার বছর।
এরপরে তাঁরাই পাইয়ের আরও নির্দিষ্ট মান বের করেন, ৩.১২৫। এটা আসল মানের আরও কাছাকাছি।
এরপর পেরিয়ে আসা যাক আরও কয়েক শতক। গ্রিসের সাইরাকিউসের আর্কিমিডিস। যিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন সেই ইউরেকা ইউরেকা চিৎকারের জন্য। খ্রিষ্টের জন্মের দুশো বছরেরও বেশি আগে তিনি পাইয়ের মান আরও নির্দিষ্ট করে বের করেছিলেন একটা সীমার মধ্যে- ৩-১/৭ থেকে ৩-১০/৭১। (তিন পূর্ণ একের সাত থেকে তিন পূর্ণ দশের একাত্তর।
এরপরে একাধিক যুগে এই সংখ্যার মান আরও বেশি দূর অব্দি নির্ণয় করার চেষ্টা হয়েছে, তবে তাঁদের সকলেই দেখেছেন, এর মান পূর্ণতা পায় না কখনও। অন্যভাবে বললে পাই একটি অমূলদ সংখ্যা বা ইরর‍্যাশনাল নাম্বার।
তবে এই সংখ্যাটিকে ‘পাই’ নামে ডাকা শুরু হয় কিন্তু অনেক পরে, আঠেরো শতকে এসে। উইলিয়াম জোনস নামে এক ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ প্রথম এই সংখ্যার নাম দেন পাই। গ্রিক অক্ষরমালার একটা অক্ষর π-এর নামেই। সেটা ১৭০৬ সালের কথা। এরপর গণিতবিদ লেনার্ড অয়লার এই সংখ্যাকে তাঁর গাণিতিক হিসেবপত্রে প্রথমবার ব্যবহার করেন ও তারপর থেকেই সংখ্যাটা জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
তারপর থেকে কত মানুষই যে এই অক্ষরটিকে তাঁদের হিসেবপত্রে কাজে লাগিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই।

আর অন্যদিকে চেষ্টা চলেছে এর মান যত বেশি দূর সম্ভব নির্ণয় করবার। আর সেই লম্বা সংখ্যামালায় কোনও প্যাটার্ন আছে কি না, সেটাও খোঁজার।
সম্প্রতি পাইয়ের মান আবার উঠে এল খবরের শিরোনামে। সুইৎজারল্যান্ডের এক দল বিজ্ঞানী সুওয়ারকম্পিউটার কাজে লাগিয়ে পাইয়ের মান বের করলেন অবিশ্বাস্য রকমের দীর্ঘ এক সংখ্যা হাজির করে। কত বড় সেই মান?
সেটা লিখতে গেলে অনেকটা জায়গা লাগবে। সংক্ষেপে বললে ৬২.৮ ট্রিলিয়ন-খানা সংখ্যা পরপর লিখতে হবে। যদি কেউ লিখতে চান, প্রথমে লিখতে হবে ৬২৮। তারপর বসাতে হবে এগারোটা সংখ্যা। অত বড় একটা সংখ্যা নির্ণয় করেও পাইয়ের মান শেষ করা যায়নি। যে কম্পিউটারে কাজটা করেন তাঁরা, সে সময় নিয়েছে ‘মাত্র’ একশো আট দিন! মানুষ খালি হাতে কাজটা করলে কতদিন সময় লাগত, সে হিসেব করে ওঠাই সম্ভব নয়।
এর আগে, গত বছর বিজ্ঞানীরা ৫০ ট্রিলিয়ন ঘর অব্দি পাইয়ের মান বের করতে পেরেছিলেন। এবারের সংখ্যা তার চেয়ে ১২.৮ ট্রিলিয়ন ঘর বেশি। তবে সেই বড় সংখ্যার শেষ দশটা ঘরের মান তাঁরা জানিয়েছেন- ৭৮১৭৯২৪২৬৪।

এত বড় একটা কাজ গিনেস বুকে উঠবে কি না, সেটার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হবে। তবে সে অপেক্ষায় রাজি ওই বিজ্ঞানীরা।
সত্যিই, পাই নিয়ে কত কী যে জানার আছে! প্রতি বছর মার্চের ১৪ তারিখকে পালন করা হয় পাই দিবস হিসেবে। কেন? ওই দিনকে যে লেখা যায় ৩/১৪ হিসেবে (আমেরিকান নিয়মে মাস আগে বসে)। সাধে কি আর William Schaaf একবার বলেছিলেন, “Probably no symbol in mathematics has evoked as much mystery, romanticism, misconception and human interest as the number pi”।
প্রাচীন ইজিপ্টের রিন্ড প্যাপিরাস থেকে ওল্ড টেস্টামেন্ট, পাই হাজির হয়ে আছে সর্বত্রই। এই অদ্ভূত সংখ্যা নিয়ে আরও বহুকাল চর্চা চলবে, এ আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি।