
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ পার্মিয়ান যুগের শেষের গণবিলুপ্তি , যেখানে প্রায় ৮১% সামুদ্রিক প্রাণী এবং অর্ধেকেরও বেশি স্থলজ প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। একদল প্রাচীন সরীসৃপ “আর্কোসোরোমর্ফ ” (Archosauromorphs) সেই বিপর্যয় থেকে বেঁচে গিয়ে বিশ্বজুড়ে বিস্তৃতি ঘটিয়ে ভবিষ্যতে ডাইনোসর ও কুমিরে রূপান্তরিত হয়।
১৩ জুন ২০২৫-এ প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহাম ও ব্রিস্টলের এক গবেষণায় জানা যায়, এই প্রাচীন সরীসৃপরা ১০,০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে অতীতের মৃত অঞ্চল বা ট্রপিকাল ডেড জোন অতিক্রম করে এক নতুন বাস্তুতন্ত্রে পৌঁছায়। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নতুন এক ভৌগোলিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যেটি TARDIS নামে পরিচিত — যার মাধ্যমে সময় ও ভূখণ্ডের বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে এই সরীসৃপদের গতিপথ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এতদিন ধারণা ছিল, তীব্র তাপমাত্রা ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে প্রাচীন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণ মেলে, আর্কোসোরোমর্ফরা এই ভয়াবহ পরিবেশও সহ্য করে এগিয়ে যায় পৃথিবীর অন্য প্রান্তে , যেখানে তারা নতুনভাবে বিস্তার ঘটাতে পারে।
ড. জোসেফ ফ্ল্যানারি-সাদারল্যান্ড বলেন, “যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ জলবায়ু সংকটে অসংখ্য প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, সেখানে কিছু জীবনধারা টিকে যায় এবং ভবিষ্যতের জীববৈচিত্র্য গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে। জীবাশ্মের অনুপস্থিতির মধ্যে এই প্রাণীরা কোথায় গিয়েছিল তা বোঝার চেষ্টা করাই আমাদের এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।”
এই অভিবাসন ও অভিযোজন ক্ষমতার কারণেই ট্রায়াসিক যুগে এই প্রজাতিগুলি আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয় এবং ভবিষ্যতে ডাইনোসরদের আবির্ভাব ঘটে।
অধ্যাপক মাইকেল বেন্টন বলেন, “জীবনের বিবর্তন অনেকাংশে পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু প্রাচীন ভূ-দৃশ্য ও বিলুপ্ত জীবদের বাস্তুতন্ত্র বোঝা কঠিন। আমরা জীবাশ্ম, প্রাচীন মানচিত্র এবং বিবর্তনের তালিকা একত্র করে সেই ফাঁক পূরণ করছি। ”
এই গবেষণা আমাদের দেখায়, কিভাবে দুর্যোগের মধ্যেও কিছু প্রাণী টিকে থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছিল।