কাদবানওয়াদি। মহারাষ্ট্রের পুণেতে ছোট্ট একটি গ্রাম। সারাবছর বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। ভীষণ রুক্ষ মাটি। রাজস্থানের গ্রামগুলোর মত। কিন্তু এখন কেউ যান কাদবানওয়াদিতে। বুঝতে কষ্ট হবে যে এখানে সারাবছর বৃষ্টি হয় না। চারদিকে সবুজে ভরে গিয়েছে! রুক্ষ, নিষ্ঠুর প্রকৃতির বিরুদ্ধে বহুবছর ধরে প্রবল লড়াই করে গ্রামের মানুষ কাদবানওয়াদিকে সবুজ করে তুলেছে! পরিবেশে দূষণ নয়, পরিবেশ শুদ্ধিকরণে এই গ্রাম আজ এক উদাহরণ! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা!
গ্রামে সবুজ অংশ ছিল মাত্র ৫০০ হেক্টর জমি! বাকিটা জঙ্গল আর রুক্ষ, শক্ত জমিতে ভরা। সেই জঙ্গলে যেমন নিম, বাবুল এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের অবস্থান ছিল, সেরকম নেকড়ে, হরিণের মত প্রাণীদেরও দেখা মিলত।
গ্রামের মানুষ প্রথমে ওই সবুজ জমিটিতে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। জল মানে সারাবছরের বৃষ্টির জলকে সংরক্ষণ করা। ওখানে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল পশুচারণ। একইসঙ্গে গ্রীষ্মকালে যাতে প্রাণীরা জল খেতে পারে তার জন্য ওখানে তৈরি করা হল জলাধার। এখানেই শেষ নয়, জঙ্গলের পাশে ২০ একর বাতিল জমি পড়ে ছিল। গাছপালাহীন, পাথুরে একটা জমি। সেখানে গ্রামের বাসিন্দারা তৈরি করলেন একটি ‘অক্সিজেন পার্ক’! এক টাকাও সরকারের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি! পুরো খরচ দিয়েছেন গ্রামের মানুষ! এখন এগিয়ে এসেছে সরকার। একাধিক স্বেছাসেবী সংস্থা।
গোটা দেশ পরিবেশ দূষণ, মানে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই অবস্থায় পুণের এই ছোট্ট গ্রাম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
অক্সিজেন পার্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা ভজনদাস পাওয়ারের। কে তিনি? গ্রামের প্রাক্তন সরপঞ্চ এবং গ্রামের স্কুলে বিজ্ঞান পড়ানো প্রাক্তন শিক্ষক। তার সঙ্গে পুণের কয়েকজন পরিবেশবিদের উদ্যোগে ওই বাতিল ২০ একর জমিতে শুরু হয়েছিল গাছের চারা পোঁতা। পিপল, তেঁতুল, বট, জামুন, বাহাওয়ার মত ৭০০ গাছের চারা পোঁতা হয়েছিল। একবছর বয়স হল এই অসাধারণ উদ্যোগের। গ্রাম এখন সবুজ হয়ে গিয়েছে! জলের অভাব না থাকার মত। রাজ্যের বনদফতরের মন্ত্রী প্রথম বছরের জন্মদিনে এসেছিলেন। জানিয়ে গিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের প্রচুর গ্রামের মানুষ কাদবানওয়াদি-কে অনুসরণ করছে জলের অভাব কাটানোর জন্য পরিবেশ শুদ্ধিকরণের মাধ্যমে!
পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসকরা কি অবহিত এই উদ্যোগ সম্পর্কে? জানা যায়নি।