অবৈধ বালিখননে বিপর্যস্ত নর্মদার বাস্তুতন্ত্র

অবৈধ বালিখননে বিপর্যস্ত নর্মদার বাস্তুতন্ত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ মে, ২০২২

ভারতের মিষ্টি জলের মাছদের মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু মাছ মহাশোল। যা হিন্দিবলয়ে মহাশীর নামেও পরিচিত। বড় চেহারা এবং সৌন্দর্যের জন্য এই মাছকে ‘নদীর রানি’ও বলা হয়। এক সময় ভারতে মহাশোল প্রজাতির মাছের ৩০ শতাংশেরই বাসস্থান ছিল নর্মদা নদী। অথচ এখন তাদের দেখা যায় না বললেই চলে!। গত পাঁচ দশকে নর্মদায় মহাশোলের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭৬ শতাংশ! এমনকি বিপন্ন প্রাণীর তালিকায়ও এই প্রজাতির মাছকে অন্তর্ভুক্ত করেছে মধ্যপ্রদেশ বায়ো-ডাইভার্সিটি বোর্ড।
প্রাণীবিজ্ঞানী, সংরক্ষণকর্মীরা মহাশোলের প্রায় বিলুপ্তির কারণ বিশ্লেষণ করতে দেখছেন দূষণ বা অত্যাধিক মাছ শিকার এর পেছনের মূল কারণ নয়। তাদের মতে, বছরের পর বছর ধরে অনিয়ন্ত্রিত বালি খাদানের জন্য নর্মদার বুক থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে মহাশোল।
মহাশোল সাধারণ স্বচ্ছ জলের মাছ। পাশাপাশি তার বৃদ্ধি এবং প্রজননের জন্য প্রয়োজন হয় মৃদু জলস্রোতের। ক্রমাগত অবৈধ বালি খাদানের ফলে ভেঙে যাচ্ছে নদীর তীরবর্তী অঞ্চল। ঘোলা হয়ে উঠছে নর্মদার জল। অস্বচ্ছ এই জলে বিশেষভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মহাশোলের প্রজনন। তার ওপর মধ্যপ্রদেশজুড়ে একাধিক বাঁধ তৈরির কারণে নর্মদার স্রোতও কমেছে অনেকটাই। প্রাণীবিজ্ঞানী ও সংরক্ষণকর্মী শ্রীপর্ণা সাক্সেনার মতে, নর্মদা থেকে শুধু মহাশোল নয়, হারিয়ে যাচ্ছে একাধিক মৎস্য প্রজাতি। সবমিলিয়ে প্রায় ৬৪ ধরনের মাছের বসবাস ছিল নর্মদা নদীতে। যাদের মধ্যে গুরমাছ, ঘোঘারা, কামাঙ্কর-সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় মাছের প্রজাতি এখন প্রায় বিলুপ্ত। মাছের সংখ্যা কমায় সারস ও অন্যান্য পাখীদের আনাগোনা কমেছে নর্মদার চরে। তাছাড়াও কমে গিয়েছে মিষ্টি জলের একাধিক কাছিমের প্রজাতির সংখ্যা। সামগ্রিকভাবে অবৈধ বালি খাদানের জন্য বিপর্যস্ত নর্মদার সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র। ২০১৫-এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সমাধান পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন কমিটি। নর্মদায় অবৈধ বালিখনন নিষিদ্ধ করেছিল জব্বলপুর হাইকোর্ট। কিন্তু ছ’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রশাসনের যথার্থ নজরদারির অভাবে সমারোহেই চলছে অবৈধ কার্যকলাপ। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই সম্পূর্ণ প্রাণহীন হয়ে পড়বে নর্মদা।