বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের জঙ্গলে ৫০০ ফ্যায়ারের লেঙ্গুর আর ৬০০ ক্যাপড লেঙ্গুরের বাস। এরা আজ বিপন্ন হওয়ার মুখে। মানুষের কাজের ফলে অরণ্য অঞ্চল কমে যাওয়াতে এরা অস্বাভাবিকভাবে নিজেদের মধ্যে মিলিত হয়ে সংকরায়িত গোষ্ঠীর জন্ম দিচ্ছে। আবার সেই সংকরায়িত গোষ্ঠীর সন্তান হওয়ার জন্য এই দুই প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা দেখা গেছে। লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ফর প্রাইমেট রিসার্চ নামক জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের গবেষণায় এ বিষয়ে জানা যাচ্ছে। ফ্যায়ারের লেঙ্গুর (ট্র্যাকিপিথেকাস ফায়ারেই) এবং ক্যাপড লেঙ্গুর (ট্র্যাকিপিথেকাস পাইলেটাস) নামে দুই লেঙ্গুর প্রজাতির মিশ্র গোষ্ঠীতে, এই দুই প্রজাতির সংকরায়ন দেখা গেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই দুই প্রজাতির মধ্যে সংকরায়ন চলতে থাকলে উভয় প্রজাতির বিলুপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এই গবেষণা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ প্রাইমাটোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে ২৩ সাল অবধি, পাঁচ বছরেরও বেশি সময় জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের পিএইচডি ছাত্র তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে একদল গবেষক বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লেঙ্গুর জনসংখ্যা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা দেখতে পান যে ৯৮ টা লেঙ্গুর গোষ্ঠীর মধ্যে ৮টা ফ্যায়ার আর ক্যাপড লেঙ্গুর নিয়ে গঠিত। আর তিনটে দলে দুটো প্রজাতির মিশ্রণ দেখা গেছে। পরে, গবেষকরা জার্মান প্রাইমেট সেন্টারের ল্যাবে এই প্রজাতির জেনেটিক নমুনা বিশ্লেষণ করে সংকরায়ন সম্বন্ধে নিশ্চিত হন। এই লেঙ্গুরের মা একজন ক্যাপড লেঙ্গুর আর বাবা একজন ফায়ার লেঙ্গুর। তারা দেখেন সংকরায়িত স্ত্রী লেঙ্গুরে মাতৃত্বের লক্ষণ দেখা গেছে। যার থেকে বোঝা যায় মহিলা সংকরায়িত প্রজাতির সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে।
সাধারণত প্রাইমেটদের মধ্যে সংকরায়ন বিরল ঘটনা। তবে সম্পর্কিত প্রজাতির স্থানের পরিসীমা একে অন্যের সাথে মিশে গেলে, সংকরায়ন ঘটতে পারে। বন উজাড়, আবাসস্থল বিভক্তকরণ, শিকার করে বা ফাঁদ পেতে প্রাইমেটদের ধরার ফলে তাদের জনসংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। এরা স্থানীয় জনসংখ্যার মধ্যে স্বচ্ছন্দভাবে মিশতে না পারলে এই ধরনের সংকরায়নের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণার প্রধান লেখক তানভীর আহমেদ বলেছেন, প্রজননশীল সংকরায়িত প্রজাতির অস্তিত্ব বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এটা থেকে বোঝা যায় এই দুটো বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে জিন প্রবাহ তাদের ভবিষ্যত জেনেটিক গঠনকে প্রভাবিত করতে পারে। ক্রিশ্চিয়ান রুস, গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী, গবেষণার ফলাফলের বিশ্বব্যাপী প্রাসঙ্গিকতার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা শুধুমাত্র স্থানীয় সমস্যা নয়। আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেলে, প্রাণীরা অস্বাভাবিকভাবে নিজেদের মধ্যে মিশে মিশ্র দল গঠন করে আর সংকরায়ন ঘটতে পারে। এতে এক বা উভয় প্রজাতির বিলুপ্তিও হতে পারে। এই অধ্যয়ন মানুষকে জেগে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন প্রাণীদের কার্যকর দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ কৌশলের জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন। আরও গবেষণা সংকরায়নের মাত্রা, মানুষের ক্রিয়াকলাপের প্রভাব আর কীভাবে এর খারাপ প্রভাব প্রতিরোধ করা যায় তা বুঝতে সাহায্য করবে।