
একজন প্রজাপতি পর্যবেক্ষকের কাছে ১৯৯২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের দৃশ্য অনেকটাই আলাদা। বিভিন্ন প্রজাতির অনুপস্থিতি, পরিচিতদেরও কম সংখ্যায় দেখতে পাওয়া- কেবল ব্যক্তিগত অনুভব নয়, পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির নেতৃত্বে পরিচালিত এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় উঠে এসেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়েস্ট অঞ্চলে ১৩৬টি প্রজাপতি প্রজাতির প্রায় ৪৫ শতাংশই গত ২১ বছরে তাদের বিস্তারের ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলেছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে সংগৃহীত প্রায় ৪.৩ কোটিরও বেশি প্রজাপতি পর্যবেক্ষণ এবং ৯০,০০০ ঘণ্টারও বেশি পর্যবেক্ষণ তথ্যর দৃঢ় ভিত্তিতেই চলেছে এই গবেষণা। ১৯৯২ সালে একটি গড় মিডওয়েস্ট কাউন্টিতে যেখানে ১০টি প্রজাতি দেখা যেত, এখন সেখানে সংখ্যা নেমে এসেছে ৯-এ। গোটা অঞ্চল জুড়ে প্রজাপতির ঘনত্বে দেখা যাচ্ছে ৪০ শতাংশ হ্রাস। এই পতন কেবল দুর্লভ প্রজাতির ক্ষেত্রে নয়, খুব সাধারণ ও ব্যাপকভাবে পরিচিত প্রজাতিগুলোর মধ্যেও সমান। যেমন, মোনার্ক (Monarch) ও বাঁধাকপির সাদা প্রজাপতি (Cabbage White)।
গবেষণার প্রধান ওয়েন্ডি লুয়েনবার্গার বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম অন্তত কিছু প্রজাতি পরিবেশগত পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। কিন্তু তথ্য যা দেখাচ্ছে, তাতে সংকট প্রায় সর্বব্যাপী এবং দীর্ঘস্থায়ী।” এই দীর্ঘমেয়াদি ধারা জাতীয় পর্যবেক্ষণগুলোর সঙ্গেও মিলে যায়। ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত ২০২৪ সালের আরেকটি গবেষণায় (২০০০-২০২০) দেখা গেছে, গোটা যুক্তরাষ্ট্রেই প্রজাপতির সংখ্যা নিম্নমুখী। কিন্তু মিশিগানের গবেষণা এক দশক বেশি সময়ের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে দেখাচ্ছে, এই সংকটের সূচনা আরও আগে- ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই। যদিও পতনের নির্দিষ্ট কারণ অন্বেষণ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল না, তবু দীর্ঘকালের জমা পর্যবেক্ষণ প্রজাপতি পতনের নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা পরিবেশগত রূপান্তরের এক নির্মম উপাখ্যান তুলে ধরেছে। এই সময়ে নিওনিকোটিনয়েড (neonicotinoid) গোষ্ঠীর কীটনাশক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। একথা প্রমাণিত যে পরিত্যক্ত জমি ও পরাগবান্ধব পতঙ্গদের উপর এটি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলস্বরূপ মধ্য-মৌসুমি অস্থিরতা, শুষ্ক গ্রীষ্ম, এবং অস্বাভাবিক উষ্ণ শীত ঋতুও প্রভাব ফেলে প্রজাপতিদের জীবনচক্রে। প্রজাপতিদের জীবনচক্র, খাদ্যাভ্যাস, পছন্দসই আবাসন এবং প্রজনন কৌশল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। কেউ পরিযায়ী, কেউ নির্দিষ্ট গাছের উপরই নির্ভরশীল, কেউবা একাধিক দফায় বংশবিস্তার করে, আবার কেউ বছরে কেবল একবার। এই ভিন্নতা তাদের অভিযোজন ক্ষমতা নির্ধারণ করে। যেমন, বছরে একবার সন্তান উৎপাদনকারী ‘মনোভোলটিন’ প্রজাপতি জলবায়ু বা পরিবেশগত বৈচিত্র্যের প্রভাবে অধিক ঝুঁকিতে আছে। এই কারণেই সংরক্ষণ কৌশল হতে হবে প্রজাতি-নির্ভর ও নির্দিষ্ট। শুধু সামগ্রিক প্রবণতা নয়, কোন ধরণের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রজাতিগুলো দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, তা বোঝার জন্যই গবেষণাটি প্রজাতিভিত্তিক বিশদে অনুসন্ধান করেছে। গবেষণার সহ-লেখক এলিস জিপকিন জানান, “মিডওয়েস্ট অঞ্চলে প্রজাপতি সমীক্ষার ঘনত্ব উত্তর আমেরিকার মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বেচ্ছাসেবকদের ধারাবাহিক কাজ ছাড়া এত দীর্ঘমেয়াদি ও নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের কাছে থাকত না।”
প্রজাপতিরা কেবল জীববৈচিত্র্যের সূচক নয়, তারা বাস্তুতন্ত্রের মূল সংযোগকারী। লার্ভা অবস্থায় তারা পাখিদের খাদ্য, পূর্ণবয়সে এরাই পরাগ সংযোগকারী। তাই প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাস, বাস্তবে বাস্তুতন্ত্রের কাঠামোতে এক গুরুতর বিপদ সংকেত।
সূত্র : Three decades of declines restructure butterfly communities in the Midwestern United States by Wendy Leuenberger, et.al ; Proceedings of National Academy of Science ;(August 04; 2025) .