
অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন মরুভূমিতে একসময় দাপিয়ে বেড়াত বিশাল আকৃতির পাখি জেনিওর্নিস নিউটোনি , যাদের ওজন আধ টনেরও বেশি ছিল এবং উচ্চতা মানুষের চেয়েও বেশি। এগুলিকে প্রায়শই “থান্ডার বার্ড” বলা হয়। এই পাখিরা ড্রোমোরনিথিড গোত্রের সদস্য, যা বহুদিন ধরে কেবল ভাঙাচোরা হাড়ের ভিত্তিতে পরিচিত ছিল। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যালাবোনা হ্রদে আবিষ্কৃত একটি প্রায় সম্পূর্ণ মাথার খুলি এই বিশাল পাখির জীবনধারার নতুন ছবি তুলে ধরেছে।
ক্যালাবোনা হ্রদ এক সময় ছিল জলাভূমি, যা খরায় শুকিয়ে যাওয়ার পর একটি প্রাকৃতিক ফাঁদে পরিণত হয়েছিল। এখানেই বহু প্রাণীর দেহাবশেষ সংরক্ষিত ছিল লবণাক্ত কাদায়। ২০১৯ সালে আবিষ্কৃত জেনিওর্নিস নিউটোনির মাথার খুলি ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে আসলে এ একটি জলচর পাখির প্রজাতি, যারা হাঁসের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটির গবেষক ফোবি ম্যাকইনার্নি জানিয়েছেন, এই পাখির ঠোঁটের গঠন একটি তোতাপাখির মতো চলনশীল ছিল, তবে আকৃতিতে অনেকটা হাঁসের মতো। এর শক্তিশালী কামড়ের ক্ষমতা এবং চওড়া মুখগহ্বর ছিল নরম উদ্ভিদ ও ফল চিবিয়ে খাওয়ার জন্য উপযোগী। মাথার খুলি ও চোয়ালের পেশি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর কামড়ের জোর অনেক ক্ষুদ্র থেরোপড ডাইনোসরের সঙ্গে তুলনীয়।
অতীতে ধারণা করা হতো এই পাখি উড়তে না পারা ইমু বা উটপাখির মতো। কিন্তু এখন জানা গেছে, এগুলো ছিল বিশাল জলচর পাখি, যা হ্রদের ধারে বাস করত এবং জলজ উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী খেত। এর মাথার উপর একটি কঠিন অস্থিবর্ম ছিল যা সম্ভবত শব্দ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হতো।প্রায় ৪৫ হাজার বছর আগে জলাভূমির সংকোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের শিকার করার ফলে এই প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে এই আবিষ্কার শুধু একটি প্রজাতির জীববৈচিত্র্য নয়, বরং বর্তমান পরিবেশ সংরক্ষণ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলে।সর্বোপরি, এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞানে, ধৈর্যের মূল্য দিতে হয়। মরুভূমির কাদামাটি থেকে পাওয়া ফাটল ধরা একটি মাথার খুলিও দীর্ঘদিনের অনুমানকে উল্টে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে পৃথিবীতে বিলুপ্ত হওয়া প্রজাতির অবশিষ্ট হাড়গুলি থেকে আরও অনেককিছু জানার আছে।