অস্ট্রেলিয়ার মহাসাগর দেখা গেল বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখিকে

অস্ট্রেলিয়ার মহাসাগর দেখা গেল বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখিকে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

সাম্প্রতিককালে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে বিঙ্গিল উপসাগরের সমুদ্র সৈকতযাত্রীরা এক অদ্ভুত কালো মতো একটা প্রাণী জলের মধ্যে দেখেছিল। প্রথমে তারা প্রাণীটি দেখে ভেবেছিল হাঙরের পাখনা বা সম্ভবত একটি কচ্ছপ। কিন্তু প্রাণীটি সম্পূর্ণরূপে আবির্ভূত হওয়ার সাথে সাথে দেখা গেছে যে তা একটা ক্যাসোওয়ারি, যা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি হিসাবে পরিচিত। ক্যাসোওয়ারি তাদের প্রাগৈতিহাসিক চেহারা, উচ্চতা এবং শক্তিশালী নখরযুক্ত পায়ের জন্য বিখ্যাত। পাখিটা উড়তে পারে না এবং মানুষের থেকে সচরাচর বেশ সতর্ক থাকে আর প্ররোচিত না হলে আক্রমণ করার সম্ভাবনা কম।
পূর্বে আমরা জানতাম ক্যাসোওয়ারি (ক্যাসুয়ারিয়াস ক্যাসুয়ারিয়াস জনসোনি) সাঁতার কাটতে পারে না। কুইন্সল্যান্ড পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের বন্যপ্রাণী কর্মকর্তা স্টিফেন ক্লো বলেন ক্যাসোওয়ারি সাঁতার কাটতে পারে এবং নদীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে পার হয়ে যেতে পারে যদি কোনো কুকুর তাকে তাড়া করে বা সেই প্রজাতির অন্য পাখির থেকে তার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিঙ্গিল বে ক্যাম্পগ্রাউন্ডের হোস্ট নিকিতা ম্যাকডোয়েলের রিপোর্ট অনুসারে, পাখিটি প্রায় ২০০ মিটার উপকূলে সাঁতার কাটছিল।
বিঙ্গিল উপসাগরটি উত্তর কুইন্সল্যান্ডের মিশন বিচের উত্তরে এবং এই অঞ্চলটিকে প্রায়ই ক্যাসোওয়ারি সৈকত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। পাখিটি অস্ট্রেলিয়ার লোকদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য প্রজাতি এবং রেইনফরেস্ট গাছের বংশবৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এই তৃণভোজীর পাচনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেগুলো অঙ্কুরিত হয় না। বর্তমানে কুইন্সল্যান্ডে আনুমানিক ৪০০০ ক্যাসোওয়ারি অবশিষ্ট রয়েছে এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ আইন ১৯৯২ অনুযায়ী এরা বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত। এই সব পাখিরা যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারা যায় বা স্থানীয় কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাই কখনই পাখির কাছে যাওয়া উচিত নয় যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াতে পারে।
তাহলে ক্যাসোয়ারি কী সত্যিই বিপজ্জনক? বলা হয় উটপাখির পাশাপাশি, এদের আক্রমণের কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। জার্নাল অফ জুলজিতে ২০০৬ সালে প্রকাশিত ক্যাসোওয়ারির আক্রমণের উপর একটি পর্যালোচনায় জানা গেছে ২২১টি ক্যাসোওয়ারি দ্বারা আক্রমণের মধ্যে ১৫০টি ছিল মানুষের বিরুদ্ধে। এই আক্রমণগুলোর মধ্যে ৭৫% ক্ষেত্রে মানুষ খাবার খাওয়াতে গিয়ে পাখিটির দ্বারা আক্রান্ত হয় যদিও তাদের খাবার খাওয়াতে বারণ করা হয়েছিল এবং ১৫% ক্ষেত্রে পাখিরা নিজেদের নখর ব্যবহার করেছে। সুতরাং মনে রাখতে হবে এদের কাছে যাওয়া বা খাওয়ানোর চেষ্টা না করাই শ্রেয় বিশেষ করে যদি কাছাকাছি ডিম বা ছানা থাকে। হঠাৎ করে সম্মুখীন হলে এই পাখিদের থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে হবে। কিন্তু পালানোর পরিকল্পনা করার সময়, মনে রাখতে হবে: তারা সাঁতার কাটতে পারে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 4 =