অ্যাথলিটদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য অলিম্পিকে গেম-চেঞ্জার হতে পারে

অ্যাথলিটদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য অলিম্পিকে গেম-চেঞ্জার হতে পারে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৮ জুলাই, ২০২৪
অলিম্পিক

সোনা আর রূপো জেতার মধ্যে মাত্র মিলিসেকেন্ডের তফাৎ। বিশ্বের তাবড় রানার, সাইক্লিস্ট, সাঁতারুরা তাদের শারীরিক ক্ষমতা সহনশীলতা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে অলিম্পিকে পদক জিততে ঝাঁপাবে। আর এর জন্য তারা দীর্ঘসময় ধরে ব্যায়াম, সঠিক পুষ্টি, ঘুম, মনঃসংযোগ বাড়ানোর প্র্যাকটিস করে চলেছেন, যা তাদের শারীরিক ক্ষমতা বাড়াতে জরুরি। এর ফলে তাদের পেশি, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্কের কোশে স্বাস্থ্যকর মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা বাড়ে, আর তার কার্যকারিতা বাড়ে। ক্ষুদ্র মাইটোকন্ড্রিয়া হল আমাদের কোশের শক্তি জোগানোর পাওয়ারহাউস। কিন্তু সহনশীলতা প্রশিক্ষণের আরেকটা দিক অ্যাথলিট এবং প্রশিক্ষকদের উপেক্ষা করা ঠিক নয়। তা হল মাইটোকন্ড্রিয়াল স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের বড়ো ভূমিকা। এটা আমাদের বিপাক, প্রতিরোধী ব্যবস্থা, মস্তিষ্ককের কাজ মসৃণভাবে চালায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্রীড়াবিদদের সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় অন্ত্রে বিভিন্ন মাইক্রোবায়োম থাকে। খাদ্য মাইক্রোবায়াম ও মাইটোকন্ড্রিয়াতে কী প্রভাব ফেলে তা জানলে ক্রীড়াবিদরা নানা ধরনের উদ্ভাবনী পুষ্টির মাধ্যমে শারীরিক ক্ষমতার নতুন স্তর অর্জন করতে পারবেন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অপাচ্য উপাদান যেমন ফাইবার, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিফেনল স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োম রূপান্তরিত করে মাইটোকন্ড্রিয়ার সংখ্যা এবং স্বাস্থ্য বাড়াতে পারে। ক্রীড়াবিদদের মাইক্রোবায়োমের গঠন ও কার্যকারিতায় বুটাইরেট নামে একটা শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি উত্পাদন হয়। এতে VO2 ম্যাক্স বৃদ্ধি পায়। VO2 ম্যাক্স এমন ফিটনেস বেঞ্চমার্ক যা তীব্র ব্যায়ামের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে, বুটাইরেট, কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং ইউরোলিথিন মেটাবোলাইট বিশেষভাবে পেশি শক্তি এবং সহনশীলতা উন্নত করে। ফাইবার ও পলিফেনলযুক্ত খাবার ব্যায়ামের কার্যকারিতা বাড়ায়।
বিপরীতে আল্ট্রা প্রসেসড খাবার যাতে ফাইবার, পলিফেনল, স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট থাকে না তা মাইটোকন্ড্রিয়াকে ক্যালোরি বিপাকের সংকেত পাঠায়। তাই ব্যায়ামের সময় ক্রীড়াবিদরা ড্রিঙ্ক, শেক, প্রোটিন বার গ্রহণ করেন যা তাদের সাথে সাথে প্রচুর শক্তি জোগায়। অন্যসময়ে এই ধরনের খাবার বেশ অস্বাস্থ্যকর কিন্তু দীর্ঘ খেলার সময় এটা খেলোয়াড়দের পক্ষে বিশেষ উপকারী। কিন্তু ব্যায়ামের সময় গ্রহণ করা এই এনার্জি বর্দ্ধক খাবার পরে স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা দরকার। দীর্ঘক্ষণ তীব্র ব্যায়াম, চূড়ান্ত পারফর্ম্যান্স, চটজলদি শক্তি বর্দ্ধক খাবারের পর গোটা শস্য, বিন, বাদাম, শাক-সবজি, ফল মূল জাতীয় খাবার মাইক্রোবায়োমের কার্যকারিতা বাড়ায়। তবে যারা অ্যান্টিবায়োটিক নিজের ইচ্ছামতো ভুলভাবে খেয়েছেন বা প্রসেসড খাবার খেতে অভ্যস্ত তাদের অন্ত্রের অণুজীব ফাইবার বা পলিফেনল হজম করাতে পারেনা। তাই তাদের শাক-সবজি বা স্বাস্থ্যকর খাবার সহ্য হয়না। কিছু ধরনের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া নানা প্রদাহ কমিয়ে, ব্যায়ামের সময় খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স বাড়াতে সাহায্য করে। দই, ইয়োগার্ট, আচার অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা বাড়িয়ে প্রদাহ কমায়।
আমরা যারা মাঝে মাঝে বা সপ্তাহান্তে ব্যায়াম করি তাদের পক্ষে মাইক্রোবায়োম এবং মাইটোকন্ড্রিয়াকে সমর্থন করে এমন পুষ্টির কৌশল বিশেষ সহায়ক। এই কৌশলগুলোর যেমন কর্মক্ষমতা উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমন স্থূলতা, ক্যান্সার এবং আলজাইমার্স রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ করার সম্ভাবনাও রয়েছে। অলিম্পিক ক্রীড়াবিদরা তাদের সবটুকু উজাড় করে পদকের জন্য লড়বেন, তার জন্য তারা পুষ্টি, খাবার, ব্যায়াম, ঘুম কিছু বাদ দেবেন না। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষরা খাবার নিয়ে কিছুটা সচেতন হলে সুস্থ শরীরে জীবন কাটাতে পারব।