
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ডেনমার্ক এবং ওডেন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের গবেষকরা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তনালীর টিস্যু নিয়ে এক চমকপ্রদ গবেষণা করেছেন। এতে দেখা গেছে, আক্রান্ত টিস্যুর অনেকগুলি কোষ একটাই জিনগত পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বহন করছে, যা সাধারণত টিউমারের কোষ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেখা যায়। অর্থাৎ, ধারণা করা হচ্ছে আক্রান্ত কোষগুলো একক পরিবর্তিত মূল কোষ থেকে উৎপত্তি লাভ করে বারবার বিভাজনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গবেষক লাসে বাখ স্টেফেনসনের মতে, অনেক নমুনায় ১০ শতাংশের বেশি কোষে একই জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, রোগের কোনো এক পর্যায়ে একটি কোষে মিউটেশন ঘটে এবং সেই কোষের বিভাজনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক পরিব্যক্ত কোষ তৈরি হয়। ঠিক যেমন টিউমার বা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এই গবেষণা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে। এতদিন আমরা জেনে এসেছি অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো এমন একটি রোগ, যেখানে রক্তনালীর ভেতরে চর্বি, প্রদাহজনিত কোষ ও সংযোগকারী টিস্যু জমা হতে থাকে। এতে রক্তনালীর গাত্র সরু ও শক্ত হয়ে যায়, ফলে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ক্রমে রক্তনালীগুলির গাত্র পাতলা হতে থাকে। ফেটে গেলে তা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
তবে এখন এই গবেষণা বলছে, কোষে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে টিস্যুতে টিউমারের মতো অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি ঘটতে পারে, যা রোগের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে।
এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায় মূলত ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। যদিও রোগের লক্ষণ সাধারণত বার্ধক্যে প্রকাশ পায়, তবে এর শুরু হয় কৈশোরেই।
গবেষণার জন্য রোগীদের অস্ত্রোপচারের সময় সংগৃহীত টিস্যু এবং রক্তের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা বলছেন, এখন আরও বেশি রোগীর নমুনা নিয়ে গবেষণা চলছে, যা ভবিষ্যতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে।
এ আবিষ্কার স্পষ্টভাবে বোঝায়, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস শুধুমাত্র কোলেস্টেরলের কারণে নয়, বরং কোষের জিনগত পরিবর্তনের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।