
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ফ্রান্সিসকো এবং গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এক অসাধারণ আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমোদিত দুটি ক্যান্সারের ওষুধ নাকি অ্যালঝাইমার রোগ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ওষুধগুলো মস্তিষ্কের কোষে অ্যালঝাইমারের (স্মৃতিভ্রংশ রোগ ) কারণে সৃষ্ট জিনগত পরিবর্তনকে প্রতিহত করতে পারে। ফলত আশা করা যায় স্মৃতিশক্তি ফেরাতে এর একটা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা কয়েকটি ধাপে পরীক্ষাটি চালান। প্রথমে অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত মস্তিষ্কের কোষে কীভাবে জিনের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয় তা বিশ্লেষণ করেন। এরপর তাঁরা ১,৩০০টি অনুমোদিত ওষুধের উপাত্ত সম্ভারে খোঁজ করেন এমন ওষুধ, যেগুলি এই জিনগত পরিবর্তনের বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এভাবে ৮৬টি ওষুধ শনাক্ত করা হয় যেগুলো নিউরন বা গ্লিয়া প্রভৃতি মস্তিষ্ক কোষে অ্যালঝাইমারের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে সক্ষম। এর মধ্যে ১০টি ওষুধ মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত , এবং ৫টি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে বিবেচিত।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যেসব রোগী অন্যান্য কারণে এই ওষুধগুলো গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল। এরপর এই ৫টি ওষুধের মধ্য থেকে দুটি—লেট্রোজোল (ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত) এবং ইরিনোটেকান (কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য ব্যবহৃত)—নির্বাচন করে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। যেসব ইঁদুরের অ্যালঝাইমারের মতো লক্ষণ স্পষ্ট সেক্ষেত্রে এই ওষুধ দুটি প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, এর ফলে নিউরন ও গ্লিয়াতে জিনের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি ফিরে আসে , প্রোটিন জমাট বাধে না, মস্তিষ্কের ক্ষয়প্রক্রিয়া রোধ হয় এবং সবচেয়ে বড়ো কথা, স্মৃতিশক্তি ফিরে আসে।
অন্যতম প্রধান গবেষক মারিনা সিরোটা বলেছেন, “কম্পিউটেশনাল পদ্ধতি আমাদের এমন এক জটিল রোগ মোকাবিলায় সাহায্য করেছে, যা এতদিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল।” এই গবেষণাকে একটি প্রাথমিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল হিসেবে ধরা হচ্ছে। গবেষকদের আশা, এটি দ্রুত বৃহৎ পরিসরে মানবদেহে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করা হবে। যদি মানবদেহেও এই ফলাফল পুনরায় প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে অ্যালঝাইমারে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ রোগীর জন্য এক নতুন আশার আলো।
সূত্র: “Cell-type-directed network-correcting combination therapy for Alzheimer’s disease” by Yaqiao Li, Carlota Pereda Serras, Jessica Blumenfeld, et.al;(21.7. 2025) , Cell.