আইসিটিপি পুরষ্কার ২০২৫

আইসিটিপি পুরষ্কার ২০২৫

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

২০২৫ সাল কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের জগতে ভারতের জন্য এক গর্বের বছর। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় আই সি টি পি পুরষ্কার এ বছর যৌথভাবে পেয়েছেন দুই ভারতীয় বিজ্ঞানী। একজন আই আই টি মাদ্রাজের তিতাস চন্দ, অপরজন বেঙ্গালুরুর আই সি টি এস-এর স্থিতধী রায়। এই ঘোষণা করেছে ইতালির ট্রিয়েস্তে-য় অবস্থিত প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা কেন্দ্র আই সি টি পি। ১৯৬৪ সালে আই সি টি পি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নোবেলজয়ী পদার্থবিদ আব্দুস সালাম। এর লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশের বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা। এই পুরস্কার সেই ঐতিহ্যেরই অংশ। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের পুরস্কারটি উৎসর্গ করা হয়েছে ইতালীয় পদার্থবিদ জিয়ানকার্লো ঘিরার্দি-র স্মৃতিতে, যিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত্তিগত ধারণা এবং এনট্যাঙ্গেলমেন্ট নিয়ে পথপ্রদর্শক কাজ করেছিলেন।

আই সি টি পি-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই পুরস্কার তাঁদের একাধিক কণার সম্মিলিত কোয়ান্টাম ( কোনো ভৌতরাশির সর্বনিম্ন নির্দিষ্ট একক বা পরিমাণ ) আচরণ তত্ত্বের ব্যতিক্রমী ও মৌলিক অবদানের স্বীকৃতি। তাঁদের গবেষণা মূলত কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স (সংঘনিত বস্তু পদার্থবিজ্ঞান) ও কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্স (কোয়ান্টাম তথ্যবিজ্ঞান)—এই দুই শাখার সংযোগস্থলে অবস্থিত। বিশেষ করে, তাঁরা কোয়ান্টাম সিস্টেমের অসাম্যাবস্থা সংক্রান্ত গতিবিদ্যা, কোয়ান্টাম সহসম্পর্ক এবং পরিমাপজনিত দশা পরিবর্তন অনুধাবনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছেন।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই গবেষণাগুলি বহু সংখ্যক পরস্পর-ক্রিয়াশীল কোয়ান্টাম কণার আচরণ বোঝার চেষ্টা করে—যেমন কঠিন পদার্থে ইলেকট্রন বা অতিশীতল গ্যাসে পরমাণু। এই ধরনের সিস্টেমে একটি কণাকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে পুরো চিত্রটা বোঝা যায় না; কণাগুলির সম্মিলিত আচরণই হল মূল বিষয়।

এই কাজের বাস্তব গুরুত্ব খুব বেশি। কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কোয়ান্টাম সেন্সর এবং অন্যান্য কোয়ান্টাম ডিভাইস কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ? কিংবা তারা ভারসাম্যহীন অবস্থায় কীভাবে আচরণ করে ? —এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে তাঁদের গবেষণা যথেষ্ট সহায়ক।

বর্তমানে আই আই টি মাদ্রাজের সহকারী অধ্যাপক তিতাস চন্দ কোয়ান্টাম ইনফরমেশন ও ওপেন কোয়ান্টাম সিস্টেমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর গবেষণার প্রয়োগ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে কোয়ান্টাম ব্যাটারি, কোয়ান্টাম যোগাযোগ ব্যবস্থা, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট/বিজড়িত দশা এবং রিসোর্স থিয়োরি। পাশাপাশি তিনি কোয়ান্টাম অপটিক্স, কোল্ড অ্যাটম ও শক্তিশালী পারস্পরিক ক্রিয়াযুক্ত সিস্টেম নিয়ে কাজ করেছেন।

অন্যদিকে, টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অধীনে বেঙ্গালুরুর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক স্থিতধী রায় অসাম্যাবস্থা সংক্রান্ত গতিবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর কাজের মূল বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে মেজারমেন্ট-ইনডিউসড ফেনোমেনা/ পরিমাপ প্রণোদিত দশা পরিবর্তন , মেনি-বডি লোকালাইজেশন / বহু বস্তু স্থানীয়করণ এবং নতুন ধরনের কোয়ান্টাম দশা। তিনি বিশেষভাবে হাইব্রিড কোয়ান্টাম সার্কিট ও পরিমাপ ব্যবহার করে জটিল আকৃতি/ গঠনভিত্তিক অবস্থা তৈরি করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।

এই স্বীকৃতি শুধু দু’জন বিজ্ঞানীর ব্যক্তিগত সাফল্য নয়—এটি ভারতীয় কোয়ান্টাম গবেষণার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক গুরুত্বেরও স্পষ্ট প্রমাণ।

 

সূত্র: 2025 ICTP Prize awarded to Titas Chanda, Sthitadhi Roy, Published – December 15, 2025 10:00 am IST.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 18 =