আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে ৭০% মানুষ চরম আবহাওয়া ভোগ করবেন

আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে ৭০% মানুষ চরম আবহাওয়া ভোগ করবেন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে

বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফল মানুষ খুব শীঘ্রই ভোগ করতে চলেছে। চারজন ব্যক্তির মধ্যে প্রায় তিনজন আগামী দু দশকে আবহাওয়ার চরম পরিবর্তনের মুখোমুখি হবেন। নরওয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট রিসার্চ (সিআইসিইআরও) -এর পদার্থবিদ বিজর্ন সামসেট বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন প্রচণ্ডভাবে হ্রাস করলেও অন্তত ১৫০ কোটি মানুষ বিশ্ব উষ্ণায়ণে প্রভাবিত হবেন। আর এখনও অবধি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর বিশেষ সম্ভাবনা নেই। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে সিআইসিইআরও জলবায়ু বিজ্ঞানী কার্লে আইলস এবং সহকর্মীদের মডেলিং অনুযায়ী আমরা যদি বর্তমান গতিবিধি চালিয়ে যাই, তাহলে তার বিপজ্জনক ফলাফলে পৃথিবীর জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বিপর্যস্ত হবে। এর মোকাবিলার একমাত্র উপায় হল পরবর্তী এক থেকে দুই দশকে অভূতপূর্ব চরম ঘটনার পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত থাকা। উত্তর গোলার্ধ রেকর্ড গরমের সম্মুখীন হয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধও বেশ গরম এক শীতকালের মধ্যে দিয়ে গেছে। এগুলোর সাথে আসবে দাবানল, বন্যা, ঝড়, খরা। যার প্রভাব ফসলে পড়বে আর বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, সাথে নিয়ে আসবে নানা রোগ।
মডেলিং বলছে এই জলবায়ু পরিবর্তন বেশ শীঘ্র ঘটতে চলেছে। চরম তাপমাত্রা, বৃষ্টি, ঝড় এগুলো ধারাবাহিকভাবে বা একসাথে ঘটতে চলেছে। গরমে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি, তার থেকে ঘনঘন দাবানলের গ্রাস বিশ্ব জুড়ে দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালে পাকিস্তানে তাপপ্রবাহ চলার সময় লাখ লাখ মানুষ বন্যার সম্মুখীন হয়। আর মানুষ একসাথে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হলে সহজেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তাপপ্রবাহের কারণে মানুষ এবং পশুর অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটে। এতে বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ, কৃষির ফলন হ্রাস, বিদ্যুৎকেন্দ্র শীতল করতে অসুবিধা, পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অতি বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা হতে পারে যাতে বসতি, পরিকাঠামো, ফসল এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি, ভূমিক্ষয়, জলের গুণমান হ্রাস পেতে পারে। বর্তমান উচ্চ কার্বন নির্গমনের জন্য গ্রীষ্মমন্ডলীয়, উপক্রান্তীয় অঞ্চল, যেখানে বেশিরভাগ মানুষের আবাস সবচেয়ে বেশি আবহাওয়া বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। কার্বন নির্গমন কমিয়ে এই প্রভাব কিছুটা কমানো গেলেও কিছু অঞ্চলে আরও সমস্যা তৈরি হবে। বায়ু দূষণ কমানো শরীরের জন্য জরুরি হলেও, বায়ু দূষণ বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাব কিছুটা কমায়। প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা বিশ্ব উষ্ণায়ণের সাথে একত্রিত হয়ে আগামী দশকগুলোয় চরম পরিস্থিতিতে খুব শক্তিশালী পরিবর্তন আনতে পারে। এশিয়া জুড়ে বায়ু দূষণ কমানোর জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, চরমে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও গ্রীষ্মকালীন বর্ষাকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এই খারাপ আবহাওয়া নিকট ভবিষ্যতে বেশিরভাগ পৃথিবীকে প্রভাবিত করবে।