আপনার খাদ্যতালিকায় চিনি থাকলে সাবধান…

আপনার খাদ্যতালিকায় চিনি থাকলে সাবধান…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩ আগষ্ট, ২০২৪
আপনার খাদ্যতালিকায় চিনি থাকলে সাবধান...

বেশির ভাগ খাবারই চিনি ছাড়া অসম্পূর্ণ। দীর্ঘ দিন ধরে একটা ধারণা চলে আসছিল যে অল্প পরিমাণে চিনি তেমন কোনও ক্ষতি করে না। কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে অল্প চিনিও ক্ষতি করে। চিনির পরিমাণ বাড়লে উত্তরোত্তর ক্ষতির পরিমাণও বাড়ে। এখন আবার বলছে খাবারের মধ্যে যে অ্যাডেড সুগার থাকে তা শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের আভ্যন্তরীণ ঘড়ির ছন্দকে প্রভাবিত করে। এমনকি সে ব্যক্তি যদি অন্যান্য সময়ে স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খায় তাহলেও এর প্রভাব পড়ে। ৩৪২ জন মধ্যবয়সী মহিলাদের নিয়ে এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা বেশি পরিমাণে অ্যাডেড সুগার গ্রহণ করেন তাদের শরীরের কোশের বয়স তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ তাদের বায়োলজিক্যাল এজ বেশি হয়। তাই হয়তো কিছু লোক একই বয়সী হওয়া সত্ত্বেও তাদের অন্যদের তুলনায় বেশি বয়স্ক বলে মনে হয়। গবেষণা বলছে এর জন্য দায়ী চিনি যা বহুকাল ধরে একটি উপেক্ষিত কারণ। বিজ্ঞানীদের মতে প্রোটিন বা ফ্যাটের সাথে চিনি যুক্ত হলে বার্ধক্য প্রক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়। যদিও আমরা বার্ধক্যের এই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা তবুও আমাদের দৈনন্দিন খাবার আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে রোগ ব্যাধি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণ কোশের ক্ষতি করে, প্রদাহ সৃষ্টি করে, তাছাড়াও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, লিভারের অসুখ, ওবেসিটি, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের খাদ্য বিজ্ঞানী বারবারা লারাইয়া বলেছেন যে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন ১০ গ্রাম অ্যাডেড সুগার কম খেলে শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক প্রায় ২.৪ মাস পিছিয়ে যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে যদিও বার্ধক্য আমাদের জীবনের একটি অংশ, তবে শর্করা বা চিনি তা ত্বরান্বিত করে। আমাদের ক্রোমোজমের প্রান্তে টেলোমেয়ার নামে একটি গঠন রয়েছে যা সাধারণত ডিএনএ সিকোয়েন্স এবং প্রোটিন থেকে তৈরি কাঠামো। অনেকটা জুতার ফিতের শেষের মতো এটি ক্রোমোজোমের শেষ প্রান্তকে রক্ষা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে চিনি টেলোমেয়ারকে ছোটো করে দেয়। আমাদের শরীর যদিও এই টেলোমেয়ারের প্রান্তকে জৈবিক প্রক্রিয়ায়র মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে দেয় তবে চিনি এই ছোটো করার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে। ফলে বার্ধ্যকের প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়। জিনের মধ্যে প্রকৃত ক্রম পরিবর্তন না করে জিনের অভিব্যক্তিতে যে পরিবর্তনগুলো ঘটে তাকে এপিজেনেটিক চেঞ্জেস বলে। এই পরিবর্তনগুলো ডিএনএ সিকোয়েন্সের স্বাভাবিক কাজে প্রভাব ফেলে। জিন কীভাবে কাজ করবে বা আদৌ কাজ করবে কিনা তা নিয়ন্ত্রণ করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির প্রকৃত জৈবিক বয়স অনুমান করা যেতে পারে। এপিজেনেটিক পরিবর্তন একটি কোশের বয়স এবং সেটি কী কী ক্ষতি বা চাপের মধ্যে দিয়ে গেছে তা বিজ্ঞানীদের বুঝতে সাহায্য করে। একজন ব্যক্তির খাদ্যতালিকা, তার লাইফস্টাইল, জেনেটিক্স অথবা অসুস্থতা- সবই একজন ব্যক্তির এপিজেনেটিক ক্লক কত দ্রুত চলছে তা প্রভাবিত করে। তবে এই গবেষণায় দেখা হয়েছে চিনিরও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাবারের তুলনায় অ্যাডেড সুগার বার্ধক্য সম্পর্কিত এপিজেনেটিক সুইচকে আরও দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে।