শিশুরা চারপাশের বিশ্বকে বিস্ময়ে পরিপূর্ণ দেখতে পায়, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা বিশেষ অবাক হননা। এই আপাতদৃষ্টিতে সহজ পরিস্থিতির পিছনে রয়েছে জটিল প্রক্রিয়া। বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে সাথে মস্তিষ্কে ‘আশ্চর্য হওয়া’ প্রক্রিয়াজাত হওয়ার উপায়ে পরিবর্তন হয়। অস্বাভাবিক উদ্দীপনা দ্রুত “গুরুত্বপূর্ণ” বা “আকর্ষণহীন” হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়, আর দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার সেই উদ্দীপনা আমাদের কাছে আর বিশেষ আশ্চর্যজনক ঠেকে না। এই বর্ধিত কার্যকারিতার জন্য নতুন উদ্দীপনা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করলেও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না যাতে আমাদের শক্তি খরচ হয়। প্রফেসর তানিয়া বরকত ও তার দল দেখেছেন, কীভাবে বিকাশমান মস্তিষ্ক আশ্চর্যজনক শব্দকে প্রক্রিয়াজাত করে আর আমাদের বড়ো হওয়ার সাথে সাথে এই প্রক্রিয়ায় কী পরিবর্তন হয়। গবেষকরা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে তাদের এই গবেষণা রিপোর্ট করেছেন।
গবেষকরা ইঁদুরদের ওপর তাদের পরীক্ষায় ধ্বনির একই ক্রম ব্যবহার করেছিলেন যেখানে অভিন্ন ধ্বনির মাঝে অনিয়মিত বিরতিতে ভিন্ন ধ্বনি শোনা গিয়েছিল। এই সময়ে, তারা ইঁদুরদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ রেকর্ড করেছিলেন। ইঁদুরের প্রতিক্রিয়া প্রাথমিকভাবে খুব শক্তিশালী ছিল, কিন্তু প্রাসঙ্গিক মস্তিষ্ক অঞ্চল পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের মতো প্রতিক্রিয়া হ্রাস পেয়েছে। মস্তিষ্কের যে যে অংশ শব্দ প্রক্রিয়া করে বিকাশ সেই সমস্ত অঞ্চলে একই সাথে ঘটে না। অডিটারী নার্ভ (শ্রবণের স্নায়ু) থেকে অডিটারী কর্টেক্স পর্যন্ত অঞ্চলের শুরুতেই অবস্থিত ইনফিরিয়র কোলিকুলাস নামে পরিচিত একটি অঞ্চল, ২০ দিন বয়সী প্রাণীর মধ্যে সম্পূর্ণরূপে পরিণত হয়েছিল। অডিটারী থ্যালামাস বিকাশ হতে ৩০ দিন সময় লাগে। আর প্রাথমিক অডিটারী কর্টেক্স -এর বিকাশে ৫০ দিন সময় লেগেছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন আশ্চর্য হওয়ার এই প্রতিক্রিয়া প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে সেরিব্রাল কর্টেক্সে গিয়ে শেষ হয়। মানুষের ক্ষেত্রে সেরিব্রাল কর্টেক্সের পূর্ণ বিকাশ ২০ বছরের কাছাকাছি হয়। গবেষকরা লক্ষ করেছেন যে অভিজ্ঞতা সেরিব্রাল কর্টেক্সে বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। যেমন কোলাহলপূর্ণ জায়গায় ইঁদুররা বেড়ে উঠলে, তাদের বাইরের নানা আওয়াজের সাথে পরিচিতি অনেক পরে হয়। বেড়ে ওঠার সময় মস্তিষ্ক, বিশেষ করে সেরিব্রাল কর্টেক্স, বিশ্বের একটা আভ্যন্তরীণ চিত্র তৈরি করে। যখন মস্তিষ্ক বাহ্যিক উদ্দীপনার সংস্পর্শে আসে, তখন তার “বিশ্বদৃষ্টি”-র তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন কিছু তার কাছে আশ্চর্যজনক বোধ হয়।