
একটা দেশের বিজ্ঞান তখনই বিপন্ন হয়, যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা লোকেরা বাজেট কাটার গিলোটিন হিসেবে বিজ্ঞানক্ষেত্রকেই বেছে নেন। উত্তর ক্যারোলাইনার, চ্যাপেল হিলের কিংবদন্তিতুল্য ‘হিউম্যান স্টাডিজ ফ্যাসিলিটি’, যা ছিল এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ-বিজ্ঞান গবেষণার হৃৎস্পন্দন, তা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের গোড়ায়, সরকারি জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হঠাৎ করেই বাতিল করে দেয় ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার সাথে চুক্তিবদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি ইজারা। এরই উপর দাঁড়িয়ে ছিল মানবদেহে দূষণের প্রভাব বিশ্লেষণের অত্যাধুনিক পরীক্ষাগারটি, যার মধ্যে নয়টি নিরোধী চেম্বারও ছিল। “আমাদের এই সক্ষমতা প্রয়োজন,” বলেন ড্যান কস্তা, এর একসময়কার টক্সিকোলজিস্ট, যার অধীনে এই গবেষণাগারে একাধিক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। তিনি আরও যোগ করেন, “আজ যে বায়ুগুণমানের মানদণ্ডে আমরা বেঁচে থাকি, তার উৎস তো এই চেম্বারই।” এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ একটু একটু করে থেমে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এই পরীক্ষাগারের বিকল্প আর কিছু নেই এবং হতে পারে না। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, “কেন?” উত্তর মেলে না। গবেষকরা উদ্বিগ্ন। এই নীরবতা যেন আরও ধারালো হয়ে উঠছে এই দুশ্চিন্তায় যে এই পরীক্ষাগারে যা সম্ভব ছিল, তা কোনো পশু ট্রায়াল বা জনস্বাস্থ্য পরিসংখ্যান দিয়ে ধরা যাবে না। মানব স্বেচ্ছাসেবকদের উপর সরাসরি প্রয়োগের মাধ্যমে, দাবানলের ধোঁয়া কিংবা ডিজেল নির্গমন কিংবা ওজোন বা সালফার ডাই-অক্সাইডের মতো পদার্থের কুফল পরীক্ষা করা হত। এক মহামারী বিশেষজ্ঞ বলেন, “এটা এক ত্রিমুখী প্রক্রিয়া। এক দিকে জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষণ, আর এক দিকে পশু মডেল। একটাও ভাঙলে গোটা কাঠামোটাই টলতে থাকবে”। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই পরীক্ষাগারের মধ্যে দিয়েই বুঝেছেন কীভাবে সূক্ষ্ম পিএম ২.৫ কণা মানুষের হৃদযন্ত্রে ধাক্কা মারে। ওখানেই তৈরি হয় জ্বলন্ত প্রমাণ যে জীবাশ্ম জ্বালানির ধোঁয়া শুধু ফুসফুস নয়, ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক ও হৃৎপিন্ডেরও ক্ষয় ডেকে আনে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মেরি রাইস বলেন, “এই ল্যাবের এক্সপোজার ডেটা না থাকলে দূষণের বিষবিদ্যার আধুনিক স্তম্ভগুলোই দাঁড়াত না।” ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া হিউম্যান স্টাডিজ ফ্যাসিলিটির বার্ষিক বাজেট ৩–৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল। বন্ধ হয়েছে এমন ৫৬৩টি ফেডারেল সুবিধার ইজারা, যার সম্মিলিত মূল্য ২৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান কেমনভাবে ‘লাভ-ক্ষতির খাতায়’ চলে এসেছে, তা এই এক সিদ্ধান্তেই স্পষ্ট। বিজ্ঞানীরা এখন একত্র হচ্ছেন, নতুন করে জোট বাঁধছেন। তাঁরা জানেন, শুধু ল্যাব নয়, এই যুদ্ধটা মানবজাতির সর্বশেষ নিঃশ্বাসের জন্যও। নিঃশ্বাস নেওয়ার অধিকার নিয়েই যেন বিজ্ঞানীরা আজ আবার পরীক্ষাগার ছেড়ে পথে নামছেন!