আলো, জিন ও আণবিক আঠা

আলো, জিন ও আণবিক আঠা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল রসায়ন, আলোকবিজ্ঞান ও জিনতত্ত্বর সম্মিলনে নতুন এক আলোক-নিয়ন্ত্রিত কৌশল-হাতিয়ার তৈরি করেছেন যার সাহায্যে বাস্তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে জীবন্ত কোশকে সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এই অসাধারণ গবেষণাটি কোশের জটিল প্রক্রিয়াগুলিকে অনুধাবনের নতুন নতুন পদ্ধতির রাস্তা খুলে দিয়েছে। উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ইয়াওয়েন য়ু জানিয়েছেন, এর ফলে হয়তো চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সংশ্লেষণী জীববিজ্ঞানে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি ঘটবে। কোশের প্রক্রিয়াগুলি জটিল। কোশের মধ্যে কখন কোথায় প্রক্রিয়াগুলি ঘটছে তার ওপর নির্ভর করে সেগুলি ক্রমাগত বদলে বদলে যায়। আলো জ্বালানো-নেভানোর ‘সুইচ’-এর সঙ্গে তুলনীয় এই রাসায়নিক হাতিয়ারটি কোশের ভিতরকার প্রক্রিয়াগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কাজ, এবং বাস্তবে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোশ কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে চর্চার কাজ সহজ করে তুলবে। কোশের বা কলার ঠিক কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাও এর ফলে একেবারে মাইক্রোমিটার স্তরে নির্ণয় করা যাবে। কোশের মধ্যে যা ঘটে সেটা এক বহু-সমন্বিত প্রক্রিয়া। তা নির্ভর করে দেশে ও কালে, অর্থাৎ ঠিক কোথায় ও কখন প্রোটিনগুলির বিস্তার লাভ করছে ও তাদের মধ্যে কী পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটছে তার ওপর। আজকের দিনে জীববিজ্ঞানের গবেষণার একটা প্রধান ভিত্তিই হল প্রোটিন আর জিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু জিনতত্ত্বে ব্যবহৃত বহু-প্রচলিত প্রকৌশলগুলির সমস্যা হচ্ছে, সেগুলি ব্যাপক সময়কাল জুড়ে ক্রিয়া করে। ফলত কোশগুলো নিজেদের অভিযোজিত করে নেবে এই ঝুঁকি থেকে যায়। তাছাড়া কোশের অত্যন্ত গতিশীল প্রক্রিয়াগুলিকে অনুধাবনের জন্য দেশে ও কালে যে ধরণের সূক্ষ্ম পরিমাপের কুশলতা প্রয়োজন, পুরোনো প্রকৌশলগুলোতে তার অভাব ছিল। এইসব অভাব দূর করবার জন্য রসায়ন, আলোকবিজ্ঞান ও জিনতত্ত্বর সম্মিলনে নতুন কিছু শক্তিশালী হাতিয়ার গড়ে তুলেছেন গবেষকরা। এখন আলোক-সংবেদী ছোটো ছোটো অণু কাজে লাগিয়ে কোশের মধ্যে নির্দিষ্ট অবস্থানে প্রোটিনের ক্রিয়াকাণ্ডকে সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। রসায়ন, আলোকবিজ্ঞান ও জিনতত্ত্বর সম্মিলনে উদ্ভূত এই নতুন পদ্ধতি গড়ে তোলার কাজের পুরোভাগে রয়েছে অধ্যাপক ইয়াওয়েন য়ু-র গবেষণাগার। তাঁর গবেষণাগার থেকে প্রকাশিত দুটি গবেষণাপত্র এখন খুব আলোচিত। তাঁরা এক ধরণের অত্যাধুনিক আণবিক ‘আঠা’ বানিয়েছেন যার আলোর সুনির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক কাজে লাগিয়ে সিস্টেমটাকে ‘জ্বালানো-নেভানো’ যায়। এই দুটি বিভিন্ন দশার একটি হয়তো প্রোটিনকে আরও সক্রিয় করবে, অন্যটি হয়তো স্তিমিত করবে। এর ফলে একাধিক ক্রিয়া-চক্রকে চালু করা সম্ভব। পূর্ববর্তী পদ্ধতিগুলির সীমাবদ্ধতা এতে দূর করা গেছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রোটিনের ক্রিয়া তো বটেই, ঠিক কোথায় সে-ক্রিয়া ঘটবে, বিশেষ বিশেষ কাজে পটু উপাঙ্গগুলি (অর্গানেল) কোথায় অবস্থিত, এবং প্রোটিনের উপযুক্ত মাত্রা নিরূপণ করা, এসবই এ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সূত্র: Umea University. “New light-tuned chemical tools control processes in living cells.” ScienceDaily. ScienceDaily, 30 January 2025.

http://<www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250130140816.htm>.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − two =